পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ইউরোপ জার্ম্মানীর প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে; জার্ম্মানীর সম্মুখে আজ একটিমাত্র গুরুতর সমস্যা—রাশিয়া। ইটালী ও ফ্রান্সে মিত্রপক্ষের অবতরণ জার্ম্মান জনগণের পক্ষে অতিরিক্ত দুর্ভোগ ও ক্লেশের কারণ হলেও এতে জার্ম্মানদের মনােবল বেড়ে গেছে। এটা সর্ব্বজনবিদিত সত্য যে, ইটালীরা কিংবা ফরাসীরা—কেউই নিজেদের দেশের ভিতরে যুদ্ধ অভ্যর্থনা করবে না। একথাও সর্ব্বজনবিদিত, মিত্রশক্তি ইটালীর রাজা এবং ভূতপূর্ব্ব প্রধান মন্ত্রী বদোগ্লিওর সঙ্গে যে গােপন চুক্তি করেছে, ইটালীর জনগণের মনে তার প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এতে মিত্রশক্তি হতাশ হয়ে পড়েছে। ফ্রান্সে মিত্রশক্তির অভিযান সম্বন্ধেও ফরাসী জাতির উদাসীনতা দেখে মিত্রশক্তি ভয়ানক হতাশ হয়েছে। কেউ যদি আমার এ বিবরণ বিশ্বাস না করেন, তবে তিনি মার্কিন সংবাদপত্রগুলাে এবং ফ্রান্স থেকে প্রেরিত আমেরিকার যুদ্ধ-সংবাদদাতাদের বিবরণ পড়ে দেখুন।

 কোন কোন লােক এইরূপ চিন্তায় অভ্যস্ত যে ভাগ্য সর্ব্বদাই বৃটিশদের আনুকূল্য করে এবং শেষ পর্য্যন্ত ইংল্যাণ্ড যে কোন প্রকারে বিজয় লাভ করবেই। শুধু সরলবিশ্বাসী লােকই এরূপ কথা বলতে পারে। ইতিহাস বড় কড়া বিধাতা; ইতিহাসের বড় বড় ঘটনা দৈবক্রমে ঘটে না। প্রত্যেক কার্য্যেরই কারণ আছে। বিগত মহাযুদ্ধে মিত্রপক্ষের বিজয় দৈবঘটনা-জনিত ছিল না—সে বিজয়লাভ সম্ভব হয়েছিল কয়েকটি বিশিষ্ট কারণে। আজকের ইউরােপে ভবিষ্যৎ অনুধাবনের কি কি উপাদান আছে এবং এই সব উপাদান থেকে শেষ পর্য্যন্ত কি ফল দাঁড়াবে—আমাদের তা খুঁজে বের করতে হবে।

 আমি সংক্ষেপে ১৯৩৯ থেকে ১৯৪২এর শেষ পর্য্যন্ত পরিস্থিতির আলােচনা করছি; তারপর চলে আসব বর্ত্তমান পরিস্থিতির পর্য্যালােচনায়। ১৯৪৩, ১৯৪১ এবং ১৯৪২-এ বৃটিশরা দারুণ দুর্দ্দশার

৭২