পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অবকাশ আছে। বৃটিশ গবর্নমেণ্ট কিন্তু দাঁর্লার দলের বিরুদ্ধে জেনারেল দ্য গলকে সমর্থন করছিলেন এবং এখনও করছেন। এই প্রশ্ন সম্বন্ধে বৃটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোন বোঝাপড়া হয় নি—যদিও বৃটিশের জেদের ফলে জেনারেল দ্য গল্ বর্ত্তমানে দাঁর্লার উত্তরাধিকারী জেনারেল জিরোকে পরাজিত করেছেন। এই বোঝাপড়া না থাকার একটা ফল হয়েছে এই যে, সেভিয়েট গবর্নমেণ্ট কূটনৈতিক বিজয়লাভ করেছে এবং ফরাসী উত্তর-আফ্রিকায় নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত করেছে। বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এই বোঝাপড়ার অভাবের দরুণ আর একটা ফল হয়েছে, জেনারেল দ্য গল ইউরোপীয় রণাঙ্গনে মিত্রপক্ষের সর্ব্বাধিনায়ক আমেরিকান জেনারেল আইসেনহাওয়ারের বিশ্বাসভাজন ব্যক্তি নন বলে, তিনি কোন স্থানই পাননি। মিত্রপক্ষ ফ্রান্সের কোন অংশ যদি দখল করতে পারে, সে অঞ্চল জেনারেল দ্য গলের কমিটির হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না—মিত্রপক্ষীয় সামরিক গবর্নমেণ্টই সে অঞ্চল শাসন করবে। পক্ষান্তরে জেনারেল দ্য গলের কর্ত্তৃত্বে যে সামান্য সেনাবাহিনী আছে—তথাকথিত স্বাধীন ফরাসীবাহিনী—ইটালীতে তাদের মিত্রপক্ষের বেতনভোগী সাধারণ সৈন্যের মতোই যুদ্ধে নিযুক্ত করা হয়। সারা পৃথিবীই জানে যে ইউরোপীয় প্রশ্ন সম্পর্কে বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েটের মধ্যে কোন প্রকার বোঝাপড়া নেই। এই তিনটি শক্তির মধ্যে যে মিত্রতা আছে, সে মিত্রতার একমাত্র ভিত্তি হচ্ছে বিরুদ্ধপক্ষীয়দের প্রতি সাধারণ ঘৃণা; তার মধ্যে কোন আভ্যন্তরীণ একতা ও সংহতি নেই। এ ধরণের মিত্রতায় কোন স্থায়ী ফললাভ হতে পারে না, কিম্বা তার দ্বারা যুদ্ধজয়ও সম্ভব নয়। গতযুদ্ধে বৃটিশ, আমেরিকান, বেলজিয়ান ও ফরাসীদের মধ্যে যে দৃঢ়সংবদ্ধ ঐক্য ছিল এ মিত্রতা তার চেয়ে ভিন্ন জিনিস। ১৯১৮ অব্দে ফ্রান্সে মিত্রশক্তির সেনাবাহিনীর সর্ব্বাধিনায়ক মার্সাল ফক ছিলেন সেই ঐক্যের প্রতীক বিশেষ।

৭৫