পাতা:দিল্লী চলো - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 দাসত্বের বিষে দুষ্ট শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান এমন ভারতীয়ও আছেন, যাঁরা ভুলে যান— ব্যক্তিদের মতো সাম্রাজ্যেরও বয়স হয়, জরা আসে এবং মৃত্যু হয়। বার্দ্ধক্য এবং তজ্জনিত জরার আক্রমণ সুরু হলে, পুনরুজ্জীবন অসম্ভব। কৃত্রিম গ্রন্থি সংযোগ করে কিংবা যাদু-যষ্টির ব্যবহারে বৃদ্ধ কখনও যুবক হতে পারে না। মার্কিণ-যষ্টির সাহায্যে বৃদ্ধ উইনষ্টন চার্চ্চিল তাঁর অতি-বৃদ্ধ সাম্রাজ্য নিয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু হংকং থেকে চিন্দুইন নদী পর্য্যন্ত যে সাম্রাজ্য কয়েক মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে, দৈবশক্তির দ্বারাও আর তার পুনর্জীবন সম্ভব নয়। এই অঞ্চল সম্বন্ধে এখন মাত্র দুটি সমস্যার সমাধানের প্রয়োজন। প্রথমতঃ পূর্ব্ব-এশিয়ায় শোচনীয় পরাজয়ের ফলে ইঙ্গ-মার্কিণরা যা হারিয়েছে মার্কিণের শক্তি ও সমরায়োজন তা পুনরুদ্ধার করতে পারবে কি? দ্বিতীয়তঃ ভবিষ্যতে ভারতের ভাগ্যে কি ঘটবে? আমরিকার সাহায্যে বৃটেন তার ভারত-সাম্রাজ্য রক্ষা করতে পারবে কি?

 প্রথম প্রশ্ন সম্বন্ধে আমি স্বীকারই করছি, প্রেসিডেণ্ট রুজভেল্ট প্রধান মন্ত্রী চার্চ্চিলের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সিদ্ধান্ত করেছেন, যে ইঙ্গ-মার্কিণ শক্তিদ্বয় প্রথমে ইউরোপের রণাঙ্গনে সকল শক্তি সন্নিবদ্ধ করবে; যতদিন বিশ্বের দরবারে এ ঘোষণা করা হয় নি, ততদিন আমি উদ্বিগ্ন ছিলাম। তাঁরা যদি বিপরীত পন্থা অবলম্বন করে “প্রশান্ত মহাসাগর প্রথম” নীতি অবলম্বন করতেন, তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে আশঙ্কিত হতাম। ইঙ্গ-মার্কিণ সৈন্যরা যদি ইটালী ও ফ্রান্সে অবতরণ না করত, এবং তারা যদি তাদের সমস্ত শক্তি প্রশান্ত মহাসাগরে নিয়োেগ করত, তা হলে জাপানের সঙ্কট দেখা দিত। সুকৌশলী প্রচারকার্য্যের সাহায্যে প্রেসিডেণ্ট রুজভেণ্ট জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে উৎসাহের সঞ্চার করতে পারতেন; এ যুদ্ধকে তিনি সমগ্র মার্কিণ জাতির পক্ষে পবিত্র যুদ্ধ কিংবা ধর্ম যুদ্ধ বলেও দাঁড় করাতে পারতেন।

৮৪