পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
দুনিয়ার দেনা

কালামাঝির দিকে ফিরে ফিরে দেখ্‌ছে আর ভাবছে রাতটা কালামাঝির কেমন করে খেয়ার বুকে কাটবে!

 গত রাতে নদীতে বান এসে অর্দ্ধেক খানা গাঁ প্রায় ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। গরু, বাছুর, ছাগল, ঘরের চাল, গরিবের ছেঁড়া কাথা, গৃহস্থের বাসন পত্র, অনেক দিনের জড় করা ধান চাল কত যে লণ্ডভণ্ড হয়ে, বানের জলে ভেসে চলে গেছে কে তা গুণ্‌বে?

 ভোরের সময় জল সরে গিয়ে নদী আবার ঠিক আগের মত স্থির। রাতে যে অমন প্রলয় কাণ্ড ঘটে গেছে এখন নদীর চেহারা দেখে তা একটুও বোঝাবার যো নাই। ডাঙ্গার দিকে নির্লজ্জ ভাবে কটাক্ষ করতে করতে নদী এখন হেসে তো চলেছে— যেন সে কিছুই জানে না। যত সব ভাঙ্গা চোরা ছেঁড়া ফাটা নোংরা ময়লা জিনিষ, বুকে নিয়ে ডাঙ্গা খানা যেন কাদায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কেউ তার দিকে চেয়ে না দেখলেই ভাল হয়। কাদা ভেঙ্গে একটি ছোট্ট মেয়ে নদীর তীরে ছুটোছুটি করছে দেখা গেল।

 ঘাটের কাছেই, তিন জন মানুষ একখানা খেয়া ধরে টানাটানি করছে, খেয়াখানা কাদার উপর উল্টে পড়ে আছে, সেটাকে টেনে এনে নদীর জলে ভাসিয়ে দেবার চেষ্টা।