পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ফকিরের ফাঁক
১৭

ছিলুম জানিনে। জ্ঞান হলে চোখ মেলে দেখি মাথার উপর সূর্য্য-কিরণ ঝলমল করছে। একদিকে নদী কলকল শব্দ বয়ে চলেছে, আর একদিকে দূর দিগন্ত পর্য্যন্ত সবুজ ঘাসে ঢাকা।

 কোথায় অন্ধকারময় নদীগর্ভে জলের তলে অচেতনে তলিয়ে যাওয়া, আর কোথায় খোলা আকাশের নীচে ঝলমলে আলোর মধ্যে, হাল্কা বাতাসে শ্বাসপ্রশ্বাস নেওয়া।

 স্বপ্নের মত দুটো ঝাপসা অনুভূতি একত্র হয়ে মাথাটা আমার গুলিয়ে দিলে।

 জানিনে কতক্ষণ এই ভাবে কেটেছে! চেয়ে দেখি মাথায় ঝাঁকড়া ঝাঁকড়া কালো চুল, হাঁটুর উপর পর্য্যন্ত কাপড়, বড় বড় চোখ, শ্যামবর্ণ, জোয়ান চেহারার একটি মানুষ, আমার মুখের মধ্যে কি ঢেলে দিচ্ছে। তারই পাশে একটি ছোট্ট মেয়ে, বয়েস নয় কি দশ, দেখতে পরীর মত আমারই মুখের দিকে একদৃষ্টে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

 আমাকে বেঁচে উঠতে দেখে মেয়েটির চোখ ছুটি আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল; হাততালি দিতে দিতে, সামনের রাস্তা ধ’রে সে ছুটে চল্‌ল এবং অল্পক্ষণের মধ্যেই একটা ছেঁড়া কম্বল এনে তাই দিয়ে আমার সর্বাঙ্গ ঢেকে দিলে।

 আমি চোখ বুজলুম। ক্লান্তিতে আমার শরীর অবসন্ন।