পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
দুনিয়ার দেনা

মনে হল যেন ঘুম আসছে। আধঘুমে বুঝলুম সেই জোয়ান লোকটি আমাকে তুলে কাঁধে ফেলে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

 হঠাৎ তারা থামল। ভারী গলায় পুরুষটি হেঁকে বল্‌ল “মইনু এগিয়ে দরজা খোল”। দরজা খোলার শব্দ শোনা গেল। তখন আমার তন্দ্রা একটু ছুটেছে। পরক্ষণেই একটা কুঁড়ে ঘরের মধ্যে, একটা পায়া ভাঙ্গা খাটিয়ার উপরে আমি শুয়ে আছি বুঝলুম।

 ঘুম, খুব ঘুম, এমন ঘুম আর কখনো ঘুমোইনি। যখন জাগলুম দেখি মন বুদ্ধি অনেখানি তাজা হয়েছে কিন্তু সর্ব্বাঙ্গে ব্যথা হাত পা নাড়ারবার ক্ষমতা পর্য্যন্ত নেই।

 কএকদিন বাস করতেই জানলুম এবং এরা বাপ ও মেয়ে, জাতে এরা জেলে, নদীতে মাছ ধ’রে সেই মাছ গাঁয়ে বেচাই বাপের ব্যবসা। ছোট মেয়েটি ঘরকন্নার সব কাজ করে। রাঁধা বাড়া, ঘর উঠান ঝাঁট, একটি দুধালী ছাগল আছে তাকে চরান, বাপকে প্রাণ দিয়ে যত্ন করা, স্নানের সময় তেল মাখানো, নেয়ে এলে গরম গরম ভাত মাটির থালায় বেড়ে সামনে বসে খাওয়ানো। আমিত দেখে অবাক্। এতটুকু মেয়ের কাজের কি শৃঙ্খলা, প্রতি কাজে কি প্রাণের টান!