পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
দুনিয়ার দেনা

তাকে সূর্ত্তি জেলে বলে। একদিন আমি বল্লুম “সূর্ত্তি আমিও তোমার সঙ্গে মাছ ধরতে যাব, তোমার উপর বসে বসে আর কত খাই?” সূর্ত্তি বল্লে “বেটা তোর ননীর দেহ তুই মাছ ধরতে পারবি ক্যানে?”

 আমি বল্লুম “খুব পারব তুমি নিয়েই চল না” “আচ্ছা কালকে যাস”, এই বলে সে কাঁধে জাল ফেলে চলে গেল। রোজ যেমন নৌকা চড়ে যায়, এদিনও সে তেমনি গেল কিন্তু বেলা যায় সন্ধ্যা হয় আজ আর সূত্তি ফেরে না। রাত্রি হল সূর্ত্তির দেখা নেই। সারারাত মইনু আর আমি দাওয়ায় বসে—সূর্ত্তি আসে না। ভোরের সময় প্রতিবেশী জেলে সিন্দি এসে বল্লে “মইনু তোর বাপ কাল মরেছে মাথায় বাজ পড়ে। সঙ্গে আমি ছিনু ট্যাঁক থেকে তার সাতগণ্ডা পয়সা খুলে এনেছি তোর জন্যে, এই নে” বলে পয়সাগুলো সিন্দি দাওয়ার উপর ছড়িয়ে দিলে।

 বাপের মরা খবর শোনামাত্র মইনু জ্ঞানশূন্য হয়ে দাওয়া থেকে নীচে উল্টে পড়ে গেল। চোখে মুখে জল দিতে দিতে জ্ঞান ফিরে এলে তাকে ঘরের মধ্যে আমি তুলে শোয়ালুম।

 কি তার কান্না! দিন রাত্রি কেঁদে কেঁদে তিনদিনের মধ্যে মইনু শুকিয়ে যেন এতটুকুটি হয়ে গেল। প্রাণপণ চেষ্টায় একটু করে ছাগল দুধ ও একটুখানি মধু এই তাকে খাওয়াতে পেরেছিলুম। তিনদিন পরে সে একটু