পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ফকিরের ফাঁক
২৩

করেই মইনু চুপ করল—তার পরেই সব শেষ। কিছুক্ষণ আমার জ্ঞান ছিল না। পরে বার বছরের মেয়ের সেই ছোট্ট শরীরটিকে, সেই সাদা ধবধবে মইনু ফুলটিকে একলাই কাঁধে করে বয়ে নদী তীরে এনে শুক্নো কাঠ জড় করে জ্বালিয়ে দিলুম। চোখের সামনে যেমনি সব পুড়ে ছাই হল অমনি আমি দেখলুম আমার বুকের ভিতরটায় মস্ত বড় একটা ফাঁক—প্রকাণ্ড কাঁক। বাতাস যেন সেখান দিয়ে হায় হায় করে বয়ে যাচ্ছে; আকাশ যেন নিজের শূন্যতা নিয়ে সেখানটায় হাঁ করে পড়ে রয়েছে।

 তখুনি, সেই শ্মশান থেকেই সেই ভাঙ্গা নৌকায় চড়ে আমি যাত্রা করলুম। কোথায় যাচ্ছি কোন ঠিকানা নেই, যাচ্ছি তো যাচ্চি। কত গ্রাম কত সহর, কত নদ নদী পার হলুম। দিনের পর রাত্রি, রাত্রির পর দিন চলেইছি।

 ক্রমে এই আকাশ বাতাস আমার বুকে গভীর সান্ত্বনা বয়ে আনতে লাগল। বুকে আমার নিত্যি যেন তারা হাত বুলিয়ে দেয়। সে কি নিবিড় আরাম কি সুগভীর শান্তি!

* * * *

 তারপর দেখি আমার বুকের মাঝে কি ভীড়। হাজার হাজার মানুষ কি বিষম ঠেলাঠেলি করে আমার বুকের মধ্যে ঢুকছে। আমার বুকের ফাঁকটা ক্রমেই