পাতা:দুনিয়ার দেনা - হেমলতা দেবী.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬
দুনিয়ার দেনা

সন্ন্যাসী, পেটের অন্নের জন্যে নিজের পরেই ভরসা, কি ভিক্ষা করা ব্যবসা, বোঝা দায়। আসল কথা লোকটাকে ধরা যায় না। কোনোদিন দেখা যায় রাস্তায় পড়ে ঘুমোচ্ছে, কোনদিন নদীর ধরে শুয়ে আছে, কোনদিন খোলামাঠে হাত পা ছড়িয়ে সটান লম্বা হয়ে পড়ে আছে।

 আর যাই হোক, লোকটা কিন্তু পাগল নয়। কথা যা কয়, তাতে পাগলামীর কোনই চিহ্ন নেই, যদিও কথা খুব কমই কয়, আর গলার আওয়াজটাও কিছু মৃদু।

 ছেঁড়া চাদরখানা মুড়ি দিয়ে ভোর রাত্রে একদিন সে গঙ্গার তীরে পড়ে আছে। মেয়েরা দুচার জন চলেছে গঙ্গাস্নানে। তাড়াতাড়ি চলতে গিয়ে হঠাৎ একজন স্ত্রীলোকের পা লোকটার গায়ে গেল ঠেকে, স্ত্রীলোকটি ব’লে উঠল “কে শুয়ে গো, ছি ছি পা ঠেকে গেল গায়ে, তুমি কে বাবা”?

 লোকটা বল্লে “আমি মানুষ”।

 স্ত্রী। এখানে কেন শুয়ে, তোমার কি ঘর নেই?

 লো। এই তো আমার ঘর, এই পৃথিবী আর এই মাটি। মাটি দিয়েই তো লোকে ঘর গড়ে?

 স্ত্রী। এমন খোলা জায়গায় পড়ে আছ, বাছা!

 লো। কেন এই তো এত বড় আকাশ আমাকে ঢেকে রয়েছে।