পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেবমন্দির

আলোকে দেবালয়-রক্ষকের গৃহ দেখিতে পাইলেন। গৃহদ্বারে গমন করিয়া তাহার নিদ্রাভঙ্গ করিলেন। মন্দির-রক্ষক ভয়প্রযুক্ত দ্বারোদঘাটন না করিয়া, প্রথমে অন্তরাল হইতে কে আসিয়াছে দেখিতে লাগিল। বিশেষ পর্যবেক্ষণে পথিকের কোন দস্যুলক্ষণ দৃষ্ট হইল না, বিশেষতঃ তৎস্বীকৃত স্বর্ণমুদ্রার লোভ সংবরণ করা তার পক্ষে কষ্টসাধ্য হইয়া উঠিল। সাত পাঁচ ভাবিয়া মন্দির-রক্ষক দ্বার খুলিয়া প্রদীপ জ্বলিয়া দিল।

 পান্থ প্রদীপ আনিয়া দেখিলেন, মন্দির-মধ্যে শ্বেত-প্রস্তর-নির্মিত শিবমূর্তি স্থাপিত আছে। সেই মূর্তির পশ্চাদ্ভাগে দুই জন মাত্র কামিনী। যিনি নবীন, তিনি দীপ দেখিবামাত্র সাবগুণ্ঠনে নম্রমুখী হইয়া বসিলেন। পরন্তু তাহার অনাবৃত প্রকোষ্ঠে হীরকমণ্ডিত চূড় এবং বিচিত্র কারুকার্য-খচিত পরিচ্ছদ, তদুপরি রত্নাভরণপারিপাট্য দেখিয়া পান্থ নিঃসন্দেহ জানিতে পারিলেন যে, এই নবীনা হীনবংশসম্ভূতা নহে। দ্বিতীয় রমণীর পরিচ্ছদের অপেক্ষাকৃত হীনার্ঘতায় পপিক বিবেচনা করিলেন যে, ইনি নবীনার সহচারিণী দাসী হইবেন; অথচ সচরাচর দাসীর অপেক্ষা সম্পন্না। বয়ঃক্রম পঞ্চত্রিংশৎ বর্ষ বোধ হইল। সহজেই যুবাপুরুষের উপলব্ধি হইল যে, বয়োজ্যেষ্ঠারই সহিত তাহার কথোপকথন হইতেছিল। তিনি সবিস্ময়ে ইহাও পর্যবেক্ষণ করিলেন যে, তদুভয় মধ্যে কাহারও পরিচ্ছদ এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের ন্যায় নহে; উভয়েই পশ্চিমদেশীয় অর্থাৎ হিন্দুস্থানী স্ত্রীলোকের বেশধারিণী। যুবক মন্দিরাভ্যন্তরে উপযুক্ত স্থানে প্রদীপ স্থাপন করিয়া, রমণীদিগের সম্মুখে দাঁড়াইলেন। তখন তাঁহার শরীরোপরি দীপরশ্মি সমূহ প্রপতিত হইলে, রমণীরা দেখিলেন যে, পথিকের বয়ঃক্রম পঞ্চবিংশতি বৎসরের