পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রেমিকে প্রেমিকে
১০১

এখনও তিলোত্তমাকে রক্ষা করিবার সময় আছে। বিমলা তাঁহার কাছে দৌড়িয়া গেলেন। পথিমধ্যে দেখিলেন, তিলোত্তমার কক্ষে প্রত্যাবর্ত্তন করা দুঃসাধ্য; সর্বত্র পাঠান-সেনা ব্যাপিয়াছে। পাঠানদিগের যে দুর্গজয় হইয়াছে, তাহাতে আর সংশয় নাই।

 বিমলা দেখিলেন, তিলোত্তমার ঘরে যাইতে পাঠান-সেনার হস্তে পড়িতে হয়, তিনি তখন ফিরিলেন। কাতর হইয়া চিন্তা করিতে লাগিলেন, কি করিয়া জগৎসিংহ আর তিলোত্তমাকে এই বিপত্তি-কালে সংবাদ দিবেন। বিমলা একটা কক্ষমধ্যে দাঁড়াইয়া চিন্তা করিতেছেন এমত সময়ে কয়েকজন সৈনিক অন্যঘর লুঠ করিয়া, সেই ঘর লুঠিতে আসিতেছে দেখিতে পাইলেন। বিমলা অত্যন্ত শঙ্কিত হইয়া ব্যস্তে কক্ষস্থ একটা সিন্ধুকের পার্শ্বে লুকাইলেন। সৈনিকেরা আসিয়া ঐ কক্ষস্থ দ্রব্যজাত লুঠ করিতে লাগিল। বিমলা দেখিলেন, নিস্তার নাই, লুঠেরা সকল যখন ঐ সিন্ধুক খুলিতে আসিবে, তখন তাহাকে অবশ্য ধৃত করিবে। বিমলা সাহসে নির্ভর করিয়া কিঞ্চিৎকাল অপেক্ষা করিলেন এবং সিন্ধুকপার্শ্ব হইতে সাবধানে সেনাগণ কি করিতেছে, দেখিতে লাগিলেন। বিমলার অতুল সাহস; বিপৎকালে সাহস বৃদ্ধি হইল। যখন দেখিলেন যে, সেনাগণ নিজ নিজ দস্যুবৃত্তিতে ব্যাপৃত হইসাছে, তখন নিঃশব্দপদবিক্ষেপে সিন্ধুকপার্শ্ব হইতে নির্গত হইয়া, পলায়ন করিলেন। সেনাগণ লুঠে ব্যস্ত, তাঁহাকে দেখিতে পাইল না। বিমলা প্রায় কক্ষদ্বার পশ্চাৎ করেন, এমন সময়ে একজন সৈনিক আসিয়া পশ্চাৎ হইতে তাঁহার হস্তধারণ করিল। বিমলা ফিরিয়া দেখিলেন, রহিম সেখ্! সে বলিয়া উঠিল, “তবে পলাতক! আর কোথায় পলাবে?”

 দ্বিতীয়বার রহিমের করকবলিত হওয়াতে বিমলার মুখ শুকাইয়া