পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে
১০৭

সেই চীৎকার শেষ হইতে না হইতেই জগতসিংহের অসি একজন পাঠানের হৃদয়ে আমূল সমারোপিত হইল। ভীম চীৎকার করিতে করিতে পাঠান প্রাণত্যাগ করিল। পাঠানের বক্ষঃ হইতে অসি তুলিবার পুর্ব্বেই আর একজন পাঠানের বর্শাফলক জগৎসিংহের গ্রীবাদেশে আসিয়া পড়িল। বর্ষা পড়িতে না পড়িতেই বিদ্যুদ্বৎ হস্তচালন দ্বারা কুমার সেই বর্শা বাম করে ধৃত করিলেন, এবং তৎক্ষণাৎ সেই বর্শারই প্রতিঘাতে বর্শা-নিক্ষেপীকে ভূমিশায়ী করিলেন। বাকি দুই জন পাঠান নিমেষমধ্যে এক কালে জগৎসিংহের মস্তক লক্ষা করিয়া আসি প্রহার করিল, জগৎসিংহ পলক ফেলিতে অবকাশ না লইয়া দক্ষিণ হস্তস্থ অসির আঘাতে এক জনের অসি সহিত প্রকোষ্ঠচ্ছেদ করিয়া ভূতলে ফেলিলেন; দ্বিতীয়ের প্রহার নিবারণ করিতে পারিলেন না; আসি মস্তকে লাগিল ন। বটে, কিন্তু স্কন্ধদেশে দারুণ আঘাত পাইলেন। কুমার আঘাত পাইয়া যন্ত্রণায় ব্যাধশরস্পৃষ্ট ব্যাঘ্রের ন্যায় দ্বিগুণ প্রচণ্ড হইলেন; পাঠান অসি তুলিয় পুনরাঘাতের উদ্যম করিতে না করিতেই কুমার, দুই হস্তে দৃঢ়তর মুষ্টিবদ্ধ করিয়া ভীষণ অসিধারণপূর্বক লাফ দিয়া আঘাতকারী পাঠানের মস্তকে মারিলেন, উষ্ণীষ সহিত পাঠানের মস্তক দুই খণ্ড হইয়া পড়িল। কিন্তু এই অবসরে যে সৈনিকের হস্তচ্ছেদ হইয়াছিল, সে বাম হস্তে কটি হইতে তীক্ষ ছুরিকা নির্গত করিয়া রাজপুত্ত্র-শরীর লক্ষ্য করিল; যেমন রাজপুত্ত্রের উল্লম্ফোথিত শরীর ভূতলে অবতরণ করিতেছিল, অমনি সেই ছুরিকা রাজপুত্ত্রের বিশাল বাহুমধ্যে গভীর বিঁধিয়া গেল। রাজপুত্র সে আঘাত সূচীবেধ মাত্র জ্ঞান করিয়া পাঠানের কটিদেশে পর্ব্বতপাতবৎ পদাঘাত করিলেন, যবন দূরে নিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িল। রাজপুত্ত্র বেগে ধাবমান হইয় তাহার শিরচ্ছেদ করিতে উদ্যত হইতেছিলেন, এমন সময়ে