পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১০
দুর্গেশনন্দিনী

মধ্যে অন্বেষণ কর। বাদী ভয়ানক বুদ্ধিমতী; সে যদি পলায়, তবে আমার মন নিশ্চিন্ত থাকিবেক না। কিন্তু সাবধান; বীরেন্দ্রের কন্যার প্রতি যেন কোন অত্যাচার না হয়।”

 সেনাগণ কতক কতক দুর্গের অন্যান্য ভাগ অন্বেষণ করিতে গেল। দুই একজন কক্ষমধ্যে অনুসন্ধান করিতে লাগিল। একজন অন্য একদিক দেখিয়া আলো লইয়া পালঙ্ক-তলমধ্যে দৃষ্টিপাত করিল। যাহা সন্ধান করিতেছিল, তাহা দেখিতে পাইয়া কহিল,—“এইখানেই আছে।”

 ওস্মানের মুখ হর্ষপ্রফুল্ল হইল। কহিলেন,—“তোমরা বাহিরে আইস, কোন চিন্তা নাই।”

 বিমলা অগ্রে বাহির হইয়া তিলোত্তমাকে বাহিরে আনিয়া বসাইছেন। তখন তিলোত্তমার চৈতন্য হইতেছে—বসিতে পারিতেন। ধীরে ধীরে বিমলাকে জিজ্ঞাসা করিলেন,—“আমরা কোথায় আসিয়াছি?”

 বিমলা কাণে-কাণে কহিলেন, “কোন চিন্তা নাই, অবগুণ্ঠন দিয়া বসে।”

 যে ব্যক্তি অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিয়াছিল, সে ওস্মানকে কহিল, “জুনাব। গোলাম খুঁজিয়া বাহির করিয়াছে।”

 ওস্মান কহিলেন, “তুমি পুরস্কার প্রার্থনা করিতেছ? তোমার নাম কি?”

 সে কহিল, “গোলামের নাম করিমবক্স, কিন্তু করিমবক্স বলিলে কেহ চেনে না। পূর্ব্বে আমি মোগল-সৈন্য ছিলাম। এজন্য সকলে রহস্যে আমাকে মোগল-সেনাপতি বলিয়া ডাকে।”

 বিমলা শুনিয়া শিহরিয়া উঠিলেন। অভিরামস্বামীর জ্যোতির্গণনা তাঁহার স্মরণ হইল।

 ওস্মান কহিলেন,—“আচ্ছা স্মরণ থাকিবে।”