পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আয়েষা
১১৭

পারিতাম; যদি সে গর্ব্ববিস্ফারিত রন্ধ্র-সমেত সুনাসা; সে রসময় ওষ্ঠাধর; সে কবরীস্পৃষ্ট প্রন্তরশ্বেত গ্রীবা; সে কর্ণাভরণস্পর্শপ্রার্থী পীবরাংস; সে স্থূল কোমল রত্নালঙ্কারখচিত বাহু; যে অঙ্গুলিতে রত্নাঙ্গুরীয় হীনভাস হইয়াছে, সে অঙ্গুলি; সে পদ্মারক্ত, কোমল করপল্লব; সে মুক্তাহার-প্রভানিন্দী পীবরোন্নত বক্ষঃ; সে ঈষদ্দীর্ঘ বপুর মনোমোহন ভঙ্গী;—যদি সকলই লিখিতে পারিতাম; তথাপি তুলি স্পর্শ করিতাম না। আয়েষার সৌন্দর্য্যসার, সে সমুদ্রের কৌস্তুভরত্ন, তাহার ধীর কটাক্ষ। সন্ধ্যাসমীরণকম্পিত নীলোৎপলতুল্য ধীর মধুর কটাক্ষ কি প্রকারে লিখিব?

 রাজপুত্ত্র আয়েষার প্রতি অনেকক্ষণ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। তাঁহার তিলোত্তমাকে মনে পড়িল। স্মৃতিমাত্র হৃদয় যেন বিদীর্ণ হইয়া গেল, শিরাসমুহমধ্যে রক্তস্রোতঃ প্রবল বেগে প্রধাবিত হইল, গভীর ক্ষত হইতে পুনর্ব্বার রক্তপ্রবাহ ছুটিল; রাজপুত্ত্র পুনর্ব্বার বিচেতন হইয়া চক্ষু মুদ্রিত করিলেন।

 খট্টারূঢ়া সুন্দরী তৎক্ষণাৎ ত্রস্তে গাত্রোখান করিলেন। যে ব্যক্তি গালিচায় বসিয়া পুস্তক পাঠ করিতেছিল, সে মধ্যে মধ্যে পুস্তক হইতে চক্ষু তুলিয়া সপ্রেম-দৃষ্টিতে আয়েষাকে নিরীক্ষণ করিতেছিল; এমন কি, যুবতী পালঙ্ক হইতে উঠিলে, তাহার যে কর্ণাভরণ দুলিতে লাগিল, পাঠান তাহাই অনেকক্ষণ অপরিতৃপ্তলোচনে দেখিতে লাগিল। আয়েষা গাত্রোত্থান করিয়া ধীরে ধীরে পাঠানের নিকট গমনপূর্ব্বক তাহার কাণে কাণে কহিলেন, “ওস্মান, শীঘ্র হকিমের নিকট লোক পাঠাও।”

 দুর্গজেতা ওস্মান খাঁই গালিচায় বসিয়াছিলেন। আয়ের কথা শুনিয়া তিনি উঠিয়া গেলেন।