পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২০
দুর্গেশনন্দিনী

তুমি এই পরম শত্রুকে যে যত্ন করিয়া শুশ্রুষা করিতেছ, ভগিনী, ভ্রাতার জন্য এমন করে না। তুমি উহার প্রাণদান করিতেছ।”

 আয়েষ ভুবনমোহন মুখে একটু হাসি হাসিয়া কহিলেন, “ওস্মান! আমি ত স্বভাবতঃ রমণী; পীড়িতের সেবা আমার পরম ধর্ম্ম; না করিলে দোষ, করিলে প্রশংসা নাই; কিন্তু তোমার কি? যে তোমার পরম বৈরী,—রণক্ষেত্রে তোমার দর্পহারী প্রতিযোগী,—স্বহস্তে যাহার এ দশা ঘটাইয়াছ, তুমি যে অনুদিন নিজে ব্যস্ত থাকিয়া তাহার সেবা করাইতেছ, তাহার আরোগ্যসাধন করাইতেছ, ইহাতে তুমিই যথার্থ প্রশংসাভাজন।”

 ওস্মান কিঞ্চিৎ অপ্রতিভের ন্যায় হইয়া কহিলেন—“তুমি আয়েষা, আপনার সুন্দর স্বভাবের মত সকলকে দেখ। আমার অভিপ্রায় তত ভাল নহে। তুমি দেখিতেছ না, জগৎসিংহ প্রাণ পাইলে আমাদিগের কত লাভ? রাজপুত্ত্রের এক্ষণে মৃত্যু হইলে আমাদিগের কি হইবে? রণক্ষেত্রে মানসিংহ জগৎসিংহের ন্যূন নহে, একজন যোদ্ধার পরিবর্ত্তে আর এক জন যোদ্ধা আসিবে। কিন্তু যদি জগৎসিংহ জীবিত থাকিয়া আমাদিগের হস্তে কারারুদ্ধ থাকে, তবে মানসিংহকে হাতে পাইলাম; সে প্রিয় পুত্ত্রের মুক্তির জন্য অবশ্য আমাদিগের মঙ্গলজনক সন্ধি করিবে; আকবরও এতাদৃশ দক্ষ সেনাপতিকে পুনঃপ্রাপ্ত হইবার জন্য অবশ্য সন্ধির পক্ষে মনোযোগী হইতে পারবে; আর যদি জগৎসিংহকে আমাদিগের সদ্ব্যবহার দ্বারা বাধ্য করিতে পারি, তবে সেও আমাদিগের মনোমত সন্ধিবন্ধন পক্ষে অনুরোধ কি যত্ন করিতে পারে; তাহার যত্ন নিতান্ত নিষ্ফল হইবে না। নিতান্ত কিছু ফল না দর্শে, তবে জগৎসিংহের স্বাধীনতার মূল্যস্বরূপ মানসিংহের নিকট বিস্তর ধনও পাইতে পারিব। সম্মুখসংগ্রামে একদিন জয়ী হওয়ার অপেক্ষাও জগৎসিংহের জীবনে আমাদিগের উপকার।”