পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তুমি না তিলোত্তমা
১২৩

স্পন্দ হইতে লাগিল; আয়েষা বুঝিলেন, কৃতান্তের গ্রাস পূর্ণ হইতে আর বিলম্ব নাই। চিকিৎসক হস্তস্থিত পাত্রে ঔষধ লইয়া বসিয়াছিলেন; এরূপ লক্ষণ দেখিবামাত্রই অঙ্গুলিদ্বারা রোগীর মুখব্যাদান করাইয়া ঐ ঔষধ পান করাইলেন। ঔষধ ওষ্ঠোপান্ত হইতে নির্গত হইয়া পড়িল; কিঞ্চিৎ উদরে গেল। উদরে প্রবেশমাত্রই রোগীর দেহের অবস্থা পরিবর্ত্তিত হইতে লাগিল; ক্রমে মুখের বিকটভঙ্গী দূরে গিয়া কান্তি স্থির হইল; বর্ণের অস্বাভাবিক শ্বেতভাব বিনষ্ট হইয়া ক্রমে রক্তসঞ্চার হইতে লাগিল; হস্তের মুষ্টি শিথিল হইল; চক্ষু স্থির হইয়া পুনর্ব্বার মুদ্রিত হইল। হকিম অত্যন্ত মনোভিনিবেশ পূর্ব্বক নাড়ী দেখিতে লাগিলেন। অনেকক্ষণ দেখিয়া সহর্ষে কহিলেন,—“আর চিন্তা নাই; রক্ষা পাইয়াছেন।”

 ওস্মান জিজ্ঞাসা করিলেন,—“জ্বরত্যাগ হইয়াছে?”

 ভিষক্ কহিলেন,—“হইয়াছে।”

 আয়েষা ও ওসমান উভয়েরই মুখ প্রফুল্ল হইল। ভিষক্ কহিলেন,— “এখন আর কোন চিন্তা নাই, আমার বসিয়া থাকার প্রয়োজন করে না; এই ঔষধ দুই প্রহর রাত্রি পর্য্যন্ত ঘড়ী ঘড়ী খাওয়াইবেন।” এই বলিয়া ভিষক্ প্রস্থান করিলেন। ওস্মান আর দুই চারি দণ্ড বসিয়া নিজ আবাসগৃহে গেলেন। আয়েষা পূর্ব্ববৎ পালঙ্কে বসিয়া ঔষধাদি সেবন করাইতে লাগিলেন।

 রাত্রি দ্বিতীয় প্রহরের কিঞ্চিৎ পূর্ব্বে রাজকুমার নয়ন উন্মীলন করিলেন। প্রথমেই আয়েষার সুখ-প্রফুল্ল মুখ দেখিতে পাইলেন। চক্ষুর কটাক্ষভার দেখিয়া আয়েষার বোধ হইল, যেন তাঁহার বুদ্ধির ভ্রম জন্মিতেছে, যেন তিনি কিছু স্মরণ করিতে চেষ্টা করিতেছেন, কিন্তু যত্ন