কতলু খাঁ স্বভাবতঃ নিষ্ঠুর; এতদুর নিষ্ঠুর যে পরপীড়ায় তাঁহার উল্লাস জন্মিত। দাম্ভিক বৈরীর ঈদৃশ অবস্থা দেখিয়া তাঁহার মুখ হর্ষোৎফুল্ল হইল। কহিলেন, “বীরেন্দ্রসিংহ! তুমি কি আমার নিকটে কিছুই যাচ্ঞা করিবে না? বিবেচনা করিয়া দেখ, তোমার সময় নিকট।”
যে দুঃসহ সন্তাপাগ্নিতে বীরেন্দ্রের হৃদয় দগ্ধ হইতেছিল, রোদন করিয়া তাহার কিঞ্চিৎ শমতা হইল। পূর্ব্বাপেক্ষা স্থিরভাবে উত্তর করিলেন, “আর কিছুই চাই না, কেবল এই ভিক্ষা যে, আমার বধকার্য্য শীঘ্র সমাপ্ত কর।”
ক। | তাই হইবে, আর কিছু? |
উত্তর। | এ জন্মে আর কিছু না। |
ক। | মৃত্যুকালে তোমার কন্যার সহিত সাক্ষাৎ করিবে না? |
এই প্রশ্ন শুনিয়া দ্রষ্টৃবর্গ পরিতাপে নিঃশব্দ হইল। বীরেন্দ্রের চক্ষে আবার উজ্জ্বলাগ্নি জ্বলিতে লাগিল।
“যদি আমার কন্যা তোমার গৃহে জীবিত থাকে, তবে সাক্ষাৎ করিব না। যদি মরিয়া থাকে, লইয়া আইস, কোলে করিয়া মরিব।”
দ্রষ্টৃবর্গ একেবারে নীরব, অগণিত লোক এতাদৃশ গভীর নিস্তব্ধ যে, সূচীপাত হইলে শব্দ শুনা যাইত। নবাবের ইঙ্গিত পাইয়া, রক্ষিবর্গ বীরেন্দ্রসিংহকে বধ্যভূমিতে লইয়া চলিল। তথায় উপনীত হইবার কিছু পূর্ব্বে একজন মুসলমান বীরেন্দ্রের কাণে কাণে কি কহিল; বীরেন্দ্র তাহা কিছু বুঝিতে পারিলেন না। মুসলমান তাঁহার হস্তে একখানি পত্র দিল। বীরেন্দ্র ভাবিতে ভাবিতে অন্য মনে ঐ পত্র খুলিয়া দেখিলেন যে, বিমলার হস্তের লেখা! বীরেন্দ্র ঘোর বিরক্তির সহিত লিপি মর্দ্দিত করিয়া দূরে নিক্ষেপ করিলেন। লিপি-বাহক লিপি তুলিয়া লইয়া