পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অবগুণ্ঠনবতী
১২৯

গেল। নিকটস্থ কোন দশক বীরেন্দ্রের এই কর্ম দেখিয়া অপরকে অনুচ্চৈঃস্বরে কহিল, “বুঝি কন্যার পত্র?”

 কথা বীরেন্দ্রের কাণে গেল। সেই দিকে ফিরিয়া কহিলেন, “কে বলে আমার কন্যা? আমার কন্যা নাই!”

 পত্রবাহক পত্র লইয়া গেল। রক্ষিবর্গকে কহিয়া গেল, “আমি গতক্ষণ প্রত্যাগমন না করি, ততক্ষণ বিলম্ব করিও।”

 রক্ষিগণ কহিল, “যে আজ্ঞা প্রভো!”

 স্বয়ং ওস্মান পত্রবাহক, এইজন্য রক্ষিবর্গ ‘প্রভু' সম্বোধন করিল।

 ওস্মান লিপিহস্তে প্রাচীরমধ্যে গেলেন; তথায় এক বকুল-বৃক্ষের অন্তরালে এক অবগুণ্ঠনবর্তী স্ত্রীলোক দণ্ডায়মান আছে। ওস্মান তাহার সন্নিধানে গিয়া চতুর্দ্দিক নিরীক্ষণ করিয়া যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা বিবৃত করিলেন। অবগুণ্ঠনবতী কহিলেন, “আপনাকে বহু ক্লেশ দিতেছি, কিন্তু আপনা হইতেই আমাদের এ দশা ঘটিয়াছে। আপনাকে আমার এ কার্য্য সাধন করিতে হইবে।”

 ওস্মান নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন।

 অবগুণ্ঠনবতী মনঃপীড়া-বিকম্পিত-স্বরে কহিতে লাগিলেন, “না করেন—না করুন, আমরা এক্ষণে অনাথা; কিন্তু জগদীশ্বর আছেন।”

 ওস্মান কহিলেন, “মা! তুমি জান না যে, কি কঠিন কর্ম্মে আমায় নিযুক্ত করিতেছ। কতলু খা ঁজানিতে পারিলে আমার প্রাণান্ত করিবে।”

 স্ত্রী কহিল, “কতলু খাঁ? আমাকে কেন প্রবঞ্চনা কর? কতলু খাঁর সাধ্য নাই যে, তোমার কেশ স্পর্শ করে।”

 ও। কতলু খাঁকে চেন না—কিন্তু চল, আমি তোমাকে বধ্যভূমিতে লইয়া যাইব।