পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩০
দুর্গেশনন্দিনী

 ওস্মানের পশ্চাৎ পশ্চাৎ অবগুণ্ঠনবতী বধ্যভূমিতে গিয়া নিস্তব্ধে দণ্ডায়মানা হইলেন। বীরেন্দ্রসিংহ তাঁহাকে না দেখিয়া একজন ভিখারীর বেশধারী ব্রাহ্মণের সহিত কথা কহিতেছিলেন, অবগুণ্ঠনবতী অবগুণ্ঠনমধ্য হইতে দেখিলে, ভিখারী অভিরাম স্বামী।

 বীরেন্দ্র অভিরাম স্বামীকে কহিলেন, “গুরুদেব! তবে বিদায় হইলাম! আমি আর আপনাকে কি বলিয়া যাইব? ইহলোকে আমার কিছু প্রার্থনীয় নাই; কাহার জন্য প্রার্থনা করিব?”

 অভিরাম স্বামী অঙ্গুলি নির্দেশ দ্বারা পশ্চাদ্বার্তনী অবগুণ্ঠনবতীকে দেখাইলেন। বীরেন্দ্রসিংহ সেই দিকে মুখ ফিরাইলেন। অমনি রমণী অবগুণ্ঠন দূরে নিক্ষেপ করিয়া বীরেন্দ্রের শৃঙ্খলাবদ্ধ পদতলে অবলুণ্ঠন করিতে লাগিলেন। বীরেন্দ্র গদ্গদ্স্বরে ডাকিলেন, “বিমলা!”

 “স্বামী! প্রভু! প্রাণেশ্বর?” বলিতে বলিতে উন্মাদিনীর ন্যায় অধিকতর উচ্চৈঃস্বরে বিমলা কহিতে লাগিলেন, “আজ আমি জগৎসমীপে বলিব, কে নিধারণ করিবে? স্বামী! কণ্ঠরত্ন! কোথা যাও! আমাদের কোথা রাখিয়া যাও।”

 বীরেন্দ্রসিংহের চক্ষে দরদর অশ্রুধারা পতিত হইতে লাগিল। হস্ত ধরিয়া বিমলাকে বলিলেন, “বিমলা? প্রিয়তমে! এ সময়ে কেন আমায় রোদন করাও। শত্রুরা দেখিলে আমায় মরণে ভীত মনে করিবে।”

 বিমলা নিস্তব্ধ হইলেন। বীরেন্দ্র পুনর্ব্বার কহিলেন, “বিমলা! আমি যাই, তোমরা আমার পশ্চাৎ আইস।”

 বিমলা কহিলেন, “যাইব।”

 আর কেহ না শুনিতে পায় এমত স্বরে কহিতে লাগিলেন, “যাইব, কিন্তু আগে এ যন্ত্রণার প্রতিশোধ করিব।”