নির্ব্বাণোন্মুখ প্রদীপবৎ বীরেন্দ্রের মুখ হর্ষোৎফুল্ল হইল; কহিলেন, “পরিবে?”
বিমলা দক্ষিণ হস্তে অঙ্গুলি দিয়া কহিলেন, “এই হস্তে! এই হস্তের স্বর্ণ ত্যাগ করিলাম; আর কাজ কি!” বলিয়া কঙ্কণাদি খুলিয়া দূরে নিক্ষেপ করিতে করিতে বলিতে লাগিলেন, “শাণিত লৌহ ভিন্ন এ হস্তে অলঙ্কার আর পরিব না।” বীরেন্দ্র হৃষ্টচিত্তে কহিলেন, “তুমি পারিবে, জগদীশ্বর তোমার মনস্কামনা সফল করুন।”
জল্লাদ ডাকিয়া কহিল, “আর বিলম্ব করিতে পারি না।”
বীরেন্দ্র বিমলাকে কহিলেন, “আর কি? তুমি এখন যাও।”
বিমলা কহিলেন, “না, আমার সম্মুখেই আমার বৈধব্য ঘটুক। তোমার রুধিরে মনের সঙ্কোচ বিসর্জন করিব।” বিমলার স্বর ভয়ঙ্কর স্থির।
“তাহাই হউক”, বলিয়া বীরেন্দ্রসিংহ জল্লাদকে ইঙ্গিত করিলেল। বিমলা দেখিতে পাইলেন, উর্দ্ধোত্থিত কুঠার সূর্য্যতেজে প্রদীপ্ত হইল; তাঁহার নয়ন-পল্লব মূহুর্ত জন্য আপনি মুদ্রিত হইল; পুনরুন্মীলন করিয়া দেখেন, বীরেন্দ্রসিংহের ছিন্ন শির রুধির-সিক্ত ধূলিতে অবলুণ্ঠন করিতেছে।
বিমলা প্রস্তরমূর্ত্তিবৎ দণ্ডায়মানা রহিলেন, মস্তকের একটি কেশ বাতাসে দুলিতেছে না। এক বিন্দু অশ্রু পড়িতেছে না। চক্ষুর পলক নাই, একদৃষ্টে ছিন্ন শির প্রতি চাহিয়া আছেন।