করিতেছেন, তাহাতে পাছে আমাদিগকে অকৃতজ্ঞ মনে করেন, এজন্যই সকল কথা ব্যক্ত করিয়া বলিতে পারিতেছি না। মহাশয়! স্ত্রীলােকের মন্দ কপালের কথা আপনার সাক্ষাতে আর কি বলিব। আমরা সহজে অবিশ্বাসিনী; আপনি আমাদিগকে রাখিয়া আসিলে,আমাদিগের সৌভাগ্য, কিন্তু যখন আমার প্রভু—এই কন্যার পিতা—ইহাকে জিজ্ঞাস করিবেন, তুমি এ রাত্রে কাহার সঙ্গে আসিয়াছ, তখন ইনি কি উত্তর করিবেন?”
যুবক ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, “এই উত্তর করিবেন যে, আমি মহারাজ মানসিংহের পুত্র জগৎসিংহের সঙ্গে আসিয়াছি।”
যদি তন্মুহূর্তে মন্দিরমধ্যে বজ্রপতন হইত, তাহা হইলেও মন্দিরবাসিনী স্ত্রীলোকেরা অধিকতর চমকিত হইয়া উঠিতেন না। উভয়েই অমনি গাত্রোখান করিয়া দণ্ডায়মান হইলেন। কনিষ্ঠা শিবলিঙ্গের পশ্চাতে সরিয়া গেলেন। বাগ্বিদগ্ধা বয়োধিকা গলদেশে অঞ্চল দিয়া দণ্ডবৎ হইলেন; অঞ্জলিবদ্ধকরে কহিলেন, “যুবরাজ! না জানিয়া সহস্র অপরাধ করিয়াছি, অবােধ স্ত্রীলােকদিগকে নিজগুণে মার্জনা করিবেন।”
যুবরাজ হাসিয়া কহিলেন, “এ সকল গুরুতর অপরাধের ক্ষমা নাই; তবে ক্ষমা করি, যদি পরিচয় দাও; পরিচয় না দিলে অবশ্য সমুচিত দণ্ড দিব।”
নরম কথায় রসিকার সকল সময়েই সাহস হয়; রমণী ঈষৎ হাসিয়া কহিল, “কি দণ্ড, আজ্ঞা হউক, স্বীকৃত আছি।”
জগৎসিংহও হাসিয়া কহিলেন, “সঙ্গে গিয়া তােমাদের বাটী রাখিয়া আসিব।”
সহচরী দেখিলেন, বিষম সঙ্কট। কোন বিশেষ কারণে তিনি নবীনার পরিচয় দিল্লীশ্বরের সেনাপতির নিকট দিতে সম্মতা ছিলেন না;