জগৎসিংহ রুগ্নশয্যায়; রোগীর দিন কত দীর্ঘ কে না জানে? তথাপি দিন গেল!
দিন গেল। দিনে দিনে জগৎসিংহের আরোগ্য জন্মিতে লাগিল। একেবারে যমদণ্ড হইতে নিষ্কৃতি পাইয়া রাজপুত্র দিনে দিনে নিরাপদ হইতে লাগিলেন। প্রথমে শরীরের গ্লানি দূর; পরে আহার; পরে বল; শেষে চিন্তা।
প্রথম চিন্তা—তিলোত্তমা কোথায়? রাজপুত্র যত আরোগ্য পাইতে গাগিলেন, তত সংবর্দ্ধিত ব্যাকুলতার সহিত সকলকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন; কেহ তুষ্টিজনক উত্তর দিল না। আয়েষা জানেন না; ওস্মান বলেন না; দাস-দাসী জানে না, কি ইঙ্গিত-মতে বলে না। রাজপুত্র কণ্টকশয্যাশায়ীর ন্যায় চঞ্চল হইলেন।
দ্বিতীয় চিন্তা—নিজ ভবিষ্যৎ। “কি হইবে” অকস্মাৎ এ প্রশ্নের কে উত্তর দিতে পারে? রাজপুত্র দেখিলেন, তিনি বন্দী! করুণহৃদয় ওস্মান ও আয়েষার অনুকম্পায় তিনি কারাগারের বিনিময়ে সুসজ্জিত, সুবাসিত শয়নকক্ষে বসতি করিতেছেন; দাস-দাসী তাঁহার সেবা করিতেছে; যখন যাহা প্রয়োজন, তাহা ইচ্ছাব্যক্তির পূর্ব্বেই পাইতেছেন; আয়েষা সহোদরাধিক স্নেহের সহিত তাঁহার যত্ন করিতেন; তথাপি দ্বারে প্রহরী; স্বর্ণপিঞ্জরবাসী সুরস পানীয়ে পরিতৃপ্ত বিহঙ্গমের ন্যায় রুদ্ধ আছেন। কবে মুক্তিপ্রাপ্ত হইবেন? মুক্তিপ্রাপ্তির কি সম্ভাবনা? তাঁহার সেনা সকল কোথায়? সেনাপতিশূন্য হইয়া তাহাদের কি দশা হইল?
তৃতীয় চিন্তা—আয়েষা। এ চমৎকারকারিণী, পরহিত-মূর্ত্তিমতী, কেমন করিয়া এই মৃন্ময় পৃথিবীতে অবতরণ করিল?
জগৎসিংহ দেখিলেন―আয়েষার বিরাম নাই, শান্তিবোধ নাই,