পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
দুর্গেশনন্দিনী

যাত্রার বালক অধিকারীর কাণমলা খাইয়া গীত গায়, দিগ্‌গজ পণ্ডিতের সেই দশা হইল।

 ক্ষণেক পরে রাজকুমার পুনর্ব্বার জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনি ব্রাহ্মণ হইয়া মাণিকপীরের পুতি পড়িতেছিলেন কেন?”

 ব্রাহ্মণ সুর থামাইয়া কহিল, “আমি মোছলমান হইয়াছি।”

 রাজপুত্র কহিলেন, “সে কি?” গজপতি কহিলেন, “যখন মোছলমান বাবুরা গড়ে এলেন, তখন আমাকে কহিলেন যে, ‘আয় বামন্‌ তোর জাতি মারিব।’ এই বলিয়া তাহারা আমাকে ধরিয়া লইয়া মুরগির পালো রাঁধিয়া খাওয়াইলেন।”

 “পালো কি?”

 দিগ্‌গজ কহিলেন, “আতপ চাউল ঘৃতের পাক।”

 রাজপুত্র বুঝিলেন, পদার্থটা কি। কহিলেন, “বলিয়া যাও!”

 “তার পর আমাকে বলিলেন, ‘তুই মোছলমান হইয়াছিস’; সেই অবধি আমি মোছলমান।”

 রাজপুত্র এই অবসরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আর সকলের কি হইয়াছে?”

 “আর আর ব্রাহ্মণ অনেকেই ঐরূপ মোছলমান হইয়াছে” রাজপুত্র ওস্‌মানের মুখপানে দৃষ্টি করিলেন। ওস্‌মান রাজপুত্র কৃত নির্ব্বাক্ তিরস্কার বুঝিতে পারিয়া কহিলেন, “রাজপুত্র; ইহাতে দোষ কি? মোছলমানের বিবেচনায় মহম্মদীয় ধর্ম্মই সত্য ধর্ম্ম; বলে হউক, ছলে হউক, সত্য-ধর্ম্ম-প্রচারে আমাদের মতে অধর্ম্ম নাই, ধর্ম্ম আছে!”

 রাজপুত্র উত্তর না করিয়া বিদ্যাদিগ্‌গজকে প্রশ্ন করিতে লাগিলেন, “বিদ্যাদিগ্‌গজ মহাশয়!”