বলা বাহুল্য যে, জগৎসিংহের সে রাত্রে নিদ্রা আসিল না। শয্যা অগ্নিবিকীর্ণবৎ, হৃদয়মধ্যে অগ্নি জলিতেছে। যে তিলোত্তমা মরিলে জগৎসিংহ পৃথিবী শূন্য দেখিতেন, এখন সে তিলোত্তমা প্রাণত্যাগ করিল না কেন, ইহাই পরিতাপের বিষয় হইল।
সে কি? তিলোত্তমা মরিল না কেন? কুসুমসুকুমারদেহ মাধুর্য্যময় কোমলালোকে বেষ্টিত যে দেহ, যে দিকে জগৎসিং নয়ন ফিরান, সেই দিকে মানসিক দর্শনে দেখিতে পান, সে দেহ শ্মশানমৃত্তিকা হইবে? এই পৃথিবী—অসীম পৃথিবীতে কোথাও সে দেহের চিহ্ন থাকিবে না? যখন এইরূপ, চিন্তা করেন, জগংসিংহের চক্ষুতে দর দর বারিধারা পড়িতে থাকে অমনি আবার দুরাত্মা কতলু খাঁর বিহারমন্দিরের স্মৃতি হৃদয়মধ্যে বিদ্যুদ্বৎ চমকিত হয, সেই কুমুমসুকুমার বধু পাপিষ্ঠ পাঠানের অঙ্কন্যস্ত দেখিতে পান, আবার দারুণাগ্নিতে হৃদয় জ্বলিতে থাকে।
তিলোত্তমা তাহার হৃদয়মন্দিরাধিষ্ঠাত্রী দেবীমূর্ত্তি।
সেই তিলোত্তমা পাঠান-ভবনে!
সেই তিলোত্তমা কতলু খাঁর উপপত্নী!