প্রাকার দীপ্ত হইতেছিল, তখন জগৎসিংহ হর্ম্ম্যতলে বিনা শয্যায়, বিনা উপাধানে লম্বমান হইয়া নিদ্রা যাইতেছিলেন।
ওস্মান আসিয়া তাঁহাকে উঠাইলেন। রাজপুত্র নিদ্রোত্থিত হইলে, ওস্মান তাঁহাকে অভিবাদন করিয়া তাঁহার হস্তে একখানি পত্র দিলেন; রাজপুত্র পত্র হস্তে লইয়া নিরুত্তরে ওস্মানের মুখের পানে চাহিয়া রহিলেন। ওস্মান বুঝিলেন, রাজপুত্র আত্ম-বিহ্বল হইয়াছেন। অতএব এক্ষণে প্রয়োজনীয় কথোপকথন হইতে পারিবে না, বুঝিতে পারিয়া কহিলেন, “রাজপুত্র! আপনার ভূমিশয্যার কারণ জিজ্ঞাসা করিতে আমার কৌতূহল নাই। এই পত্র-প্রেরিকার নিকট আমি প্রতিশ্রুত ছিলাম যে, এই পত্র আপনাকে দিব, যে কারণে এতদিন এই পত্র আপনাকে দিই নাই, সে কারণ দূর হইয়াছে। আপনি সকল জ্ঞাত হইয়াছেন। অতএব পত্র আপনার নিকট রাখিয়া চলিলাম, আপনি অবসরমতে পাঠ করিবেন; অপরাহ্ণে আমি পুনর্ব্বার আসিব। প্রত্যুত্তর দিতে চাহেন, তাহাও লইয়া লেখিকার নিকট প্রেরণ করিতে পারিব।”
এই বলিয়া ওস্মান রাজপুত্রের নিকট পত্র রাখিয়া প্রস্থান করিলেন।
রাজপুত্র একাকী বসিয়া সম্পূর্ণ সংজ্ঞপ্রাপ্ত হইলে, বিমলার পত্র পাঠ করিতে লাগিলেন। আদ্যোপান্ত পাঠ করিয়া অগ্নি প্রস্তুত করিয়া তাহাতে নিক্ষেপ করিলেন। যতক্ষণ পত্রখানি জ্বলিতে লাগিল, ততক্ষণ তৎপ্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন। যখন পত্র নিঃশেষ দগ্ধ হইয়া গেল, তখন আপনা-আপনি কহিতে লাগিলেন, “স্মৃতিচিহ্ন অগ্নিতে নিক্ষেপ করিয়া নিঃশেষ করিতে পারিলাম; স্মৃতিও ত সন্তাপে পুড়িতেছে, নিঃশেষ হয় না কেন?”
জগৎসিংহ রীতিমত প্রাতঃকৃত্য সমাপন করিলেন। পূজাহ্নিক শেষ