ওস্মানের মুখ একটু আরক্ত হইল। কিঞ্চিৎ কর্কশ ভঙ্গিতে কহিলেন, “বোধ করি, পাঠান সর্ব্বাংশে আপনার সহিত অভদ্রতা না করিয়া থাকিবে।”
রাজপুত্র কুপিতও হইলেন, লজ্জিতও হইলেন; এবং কহিলেন, “না মহাশয়। আমি নিজের কথা কহিতেছি না। আপনি আমার প্রতি সর্ব্বাংশে দয়া প্রকাশ করিয়াছেন এবং বন্দী করিয়াও প্রাণদান দিয়াছেন; সেনা-হন্তা শত্রুর সাংঘাতিক পীড়ার শমতা করাইয়াছেন,―যে ব্যক্তি কারাবাসে শৃঙ্খলবদ্ধ থাকিবে, তাহাকে প্রমোদাগারে বাস করাইতেছেন। আর অধিক কি করিবেন? কিন্তু আমি বলি কি,―আপনাদের ভদ্রতাজালে জড়িত হইতেছি; এ সুমের পরিণাম কিছু বুঝিতে পারিতেছি না। আমি বন্দী হই, আমাকে কারাগারে স্থান দিন। এ দয়ার শৃঙ্খল হইতে মুক্ত করুন। আর যদি বন্দী না হই, তবে আমাকে এ হেমপিঞ্জরে আবদ্ধ রাখার প্রয়োজন কি?”
ওস্মান স্থিরচিত্তে উত্তর করিলেন, “রাজপুত্র! অশুভের জন্য ব্যস্ত কেন? অমঙ্গলকে ডাকিতে হয় না, আপনিই আইসে।”
রাজপুত্র গর্ব্বিত বচনে কহিলেন, “আপনার এ কুসুম-শয্যা ছাড়িয়া, কারাগারের শিলাশয্যায় শয়ন করা রাজপুতেরা অমঙ্গল বলিয়া গণে না।”
ওস্মান কহিলেন, “শিলাশয্যা যদি অমঙ্গলের চরম হইত, ক্ষতি কি?”
রাজপুত্র ওস্মান প্রতি তীব্র দৃষ্টি করিয়া কহিলেন, “যদি কতলু খাঁকে সমুচিত দণ্ড দিতে না পারিলাম, তবে মরণেই বা ক্ষতি কি?”
ওস্মান কহিলেন, “যুবরাজ! সাবধান! পাঠানের যে কথা সেই কাজ!”