বিমলা এইরূপ পুরীমধ্যে স্থানে স্থানে ভ্রমণ করিয়া এক সুসজ্জীভূত গৃহে প্রবেশ করিলেন, প্রবেশানন্তর দ্বার অর্গলবদ্ধ করিলেন। এ উৎসবের দিনেও সে কক্ষমধ্যে একটি মাত্র ক্ষীণালোক জ্বলিতেছিল। কক্ষের এক প্রান্তভাগে একখানি পালঙ্ক ছিল। সেই পালঙ্কে আপাদমস্তক শয্যোত্তরচ্ছদে আবৃত হইয়া কেহ শয়ন করিয়াছিল। বিমলা পালঙ্কের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া মৃদুস্বরে কহিলেন, “আমি আসিয়াছি।”
শয়ান ব্যক্তি চমকিতের ন্যায় মুখের আবরণ দূর করিল; বিমলাকে চিনিত পারিয়া শয্যোত্তরচ্ছদ ত্যাগ করিয়া, গাত্রোত্থান করিয়া বসিল, কোন উত্তর করিল না।
বিমলা পুনরপি কহিলেন, “তিলোত্তমা! আমি আসিয়াছি।” .
তিলোত্তমা তথাপি কোন উত্তর করিলেন না। স্থিরদৃষ্টিতে বিমলার মুখপ্রতি চাহিয়া রহিলেন।
তিলোত্তমা আর ব্রীড়া-বিবশা বালিকা নহে। তদ্দণ্ডে তাঁহাকে সেই ক্ষীণালোকে দেখিলে বোধ হইত যে, দশ বৎসর পরিমাণ বয়োবৃদ্ধি হইয়াছে; দেহ অত্যন্ত শীর্ণ, মুখ মলিন। পরিধান একখানি সঙ্কীর্ণায়তন বাস। অবিন্যস্ত কেশভারে ধূলিরাশি জড়িত হইয়া রহিয়াছে। অঙ্গে অলঙ্কারের লেশ নাই; কেবল পূর্ব্বে যে অলঙ্কার পরিধান করিতেন, তাহার চিহ্ন রহিয়াছে মাত্র।
বিমলা পুনরপি কহিলেন, “আমি আসিব বলিয়াছিলাম—আসিয়াছি। কথা কহিতেছ না কেন?”
তিলোত্তমা কহিলেন, “যে কথা ছিল, তাহা সকল কহিয়াছি, আর কি কহিব?”
বিমলা তিলোত্তমার স্বরে বুঝিতে পরিলেন যে, তিলোত্তমা রোদন ১২