পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
দুর্গেশনন্দিনী

 দাসী কহিল, “দ্বিতীয় প্রহর অতীত হইয়াছে।” তিলোত্তমা দাসীর বহির্গমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। দাসী প্রয়োজন সমাপন করিয়া চলিয় গেল, তিলোত্তমা বিমলা-প্রদত্ত অঙ্গুরীয় লইয়া কক্ষমধ্য হইতে যাত্রা করিলেন। তখন আবার মনে আশঙ্কা হইতে লাগিল; পা কাপে, হৃদয় কাপে, মুখ শুকায়; একপদে অগ্রসর একপদে পশ্চাৎ হইতে লাগিলেন। ক্রমে সাহসে ভর করিয়া অন্তঃপুর-দ্বার পর্যন্ত গেলেন।পৌরবর্গ খোঁজা হাবসী প্রভৃতি সকলেই প্রমোদে ব্যস্ত; কহ তাহাকে দেখিল না; দেখিলেও তৎপ্রতি মনোযোগ করিল না; কিন্তু তিলোত্তমার বোধ হইতে লাগিল, যেন সকলেই তাহাকে লক্ষ্য করিতেছে। কোন ক্রমে অন্তঃপুর-দ্বার পর্যন্ত আসিলেন; তথায় প্রহরিগণ আনন্দে উন্মত্ত; কেহ নিদ্রিত, কেহ জাগ্রত, কেহ অচেতন, কেহ অর্দ্ধচেতন। কেহ তাহাকে লক্ষ্য করিল না। একজন মাত্র দ্বারে দণ্ডায়মান ছিল, সেও প্রহরীর বেশধারী। সে তিলোত্তমাকে দেখিয়া কহিল, “আপনার হাতে আঙ্গটি আছে?

 তিলোত্তমা সভয়ে বিমলাদত্ত অঙ্গুরীয় দেখাইলেন। প্রহরিবেশী উত্তমরূপে সেই অঙ্গুরীয় নিরীক্ষণ করিয়া নিজ হস্তস্থ অঙ্গুরীয় তিলোত্তমাকে দেখাইল। পরে কহিল, “আমার সঙ্গে আসুন, কোন চিন্তা নাই।”

 তিলোত্তমা চঞ্চলচিত্তে প্রহরীর সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। অন্তঃপুরদ্বারে প্রহরিগণ যেরূপ শিথিলভাবাপন্ন, সর্ব্বত্র প্রহরিগণ প্রায় সেইরূপ। বিশেষ অদ্য রাত্রে অবারিত-দ্বার, কেহই কোন কথা কহিল না। প্রহরী তিলোত্তমাকে লইয়া নানা দ্বার, নানা প্রকোষ্ঠ, নানা প্রাঙ্গণভূমি, অতিক্রম করিয়া আসিতে লাগিল। পরিশেষে দুর্গপ্রান্তে ফটকে আসিয়া কহিল, “এক্ষণে কোথায় যাইবেন, আজ্ঞা করুন, লইয়া। যাই।”