বিমলা কি বলিয়া দিয়াছিলেন, তাহা তিলোত্তমার স্মরণ হইল না। আগে জগৎসিংহকে স্মরণ হইল। ইচ্ছা প্রহরীকে কহেন, “যথায় রাজপুত্র আছেন, তথায় লইয়া চল।” কিন্তু পূর্ব্বশত্রু লজ্জা আসিয়া বৈরী সাধিল। কথা মুখে বাধিয়া আসিল। প্রহরী পুনর্ব্বার জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় লইয়া যাইব?
তিলোত্তমা কিছুই বলিতে পারিলেন না, যেন জ্ঞানশূন্য হইলেন, আপনা-আপনিই হৃৎকম্প হইতে লাগিল। নয়নে দেখিতে, কর্ণে, শুনিতে পান না; মুখ হইতে কি কণা বাহির হইল, তাহাও কিছু জানিতে পারিলেন না; প্রহরীর কর্ণে অর্দ্ধস্পষ্ট “জগৎসিংহ” শব্দটি প্রবেশ করিল।
প্রহরী কহিল, “জগৎসিংহ এক্ষণে কারাগারে আবদ্ধ আছেন, সে অন্যের অগম্য। কিন্তু আমার প্রতি এমন আজ্ঞা আছে যে, আপনি, যেথায় যাইতে চাহিবেন, তথায় লইয়া যাইব, আসুন।”
প্রহরী দুর্গমধ্যে পুনঃপ্রবেশ করিল, তিলোত্তমা কি করিতেছেন, কোথায় যাইতেছেন, কিছুই বুঝিতে না পারিয়া কলের পুত্তলীর ন্যায় সঙ্গে সঙ্গে ফিরিলেন; সেই ভাবে তাহার সঙ্গে সঙ্গে চলিলেন। প্রহরী কারাগারদ্বারে গমন করিয়া দেখিল যে, অন্যত্র প্রহরিগণ যেরূপ প্রমোদসক্ত হইয়া নিজ নিজ কার্য্যে শৈথিল্য করিতেছে, এখানে সেরূপ নহে, সকলেই স্ব স্ব স্থানে সতর্ক আছে। একজনকে জিজ্ঞাসা করিল, “রাজপুত্র কোন স্থানে আছেন?” সে অঙ্গুলি নির্দেশ দ্বারা দেখাইয়া দিল। অঙ্গুরীয়বাহক প্রহরী কারাগাররক্ষাকে জিজ্ঞাস করিল, “বন্দী এক্ষণে নিদ্রিত না জাগরিত আছেন?” কারাগাররক্ষী কক্ষদ্বার পর্য্যস্ত গমন করিয়া 'প্রত্যাগমন পূর্ব্বক কহিল, “বন্দীর উত্তর পাইয়াছি, জাগিয়া আছেন।”