পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুক্তকণ্ঠ
১৯৫

  কোন উত্তর না করিয়া ধীরে ধীরে গোলাবফুলটি নিঃশেষে ছিন্ন করিলেন। পুষ্প শতখগু হইলে কছিলেন, “যুবরাজ! আজ যে তোমার নিকট এ ভাবে বিদায় লইব, তাহা মনে ছিল না। আমি অনেক সহ্য করিতে পারি, কিন্তু কারাগারে তোমাকে একাকী যে এ মনঃপীড়ার ধন্ত্রণ ভোগ করিতে রাখিয়া যাইব, তাহা পারিতেছি না। জগৎসিংহ! তুমি আমার সঙ্গে বাহিরে আইস; অশ্বশীলায় অশ্ব আছে, দিব; অন্য রাত্রেই নিজ শিবিরে যাইও।”

 তদ্দণ্ডে যদি ইষ্টদেবী ভবানী সশরীরে আসিয়। বরপ্রদা হইতেন, তথাপি রাজপুত্র অধিক চমৎকৃত হইতে পারিতেন না। রাজপুত্র প্রথম উত্তর করিতে পারলেন না আয়েষা পুনর্ব্বার করিলেন, “রাজকুমার! এস।”

 জগৎসিংহ অনেকক্ষণ পরে কছিলেন, “আয়েষা তুমি আমাকে কারাগার হইতে মুক্ত করিয়া দিবে?”

 কহিলেন, “এই দণ্ডে।”

 রা। তোমার পিতার অজ্ঞাতে?

 আ। সে জন্য চিন্ত করিও না, তুমিশিবিরে গেলে—আমি। তাহাকে জানাইব।

 "প্রহরীর যাইতে দেবে কেন?”

 আয়েষা কণ্ঠ হইতে, রত্নকণ্ঠী ছিঁড়িয়া দেখাইয়া কহিলেন, “এই পুরস্কার লোভে প্রহরী পথ ছাড়িয়া দিবে।”

 রাজপুত্র পুনর্ব্বার কহিলেন, “এ কথা প্রকাশ হইলে তুমি তোমার পিতার নিকট যন্ত্রণা পাইবে।”

 “তাহাতে ক্ষতি কি?”