তথাপি দেখিতে পাইলেন না। ক্ষণেক স্তম্ভের ন্যায় স্তির দাঁড়াইয়া পরে ক্রাধ-কম্পিতস্বরে আগন্তুক কহিল, “নবাবপুত্রি! এ উত্তম।”
উভরে মুখ তুলিয়া দেখিলন,—ওসমান।
ওসমান তাহার অনুচর অঙ্গুরীবপাহকের নিকট সবিশেয অবগত হইয়া অয়েষার সন্ধানে আসিয়াছিলেন। রাজপূত্র, ওসমানকে সে স্থলে দেখিয়া আয়েষার জন্য শঙ্কান্বিত হইলেন, পাছে আয়েষা, ওসমান বা -কতল খাঁর নিকট তিরস্কৃতা বা অপমানিতা হন। ওসমান সে ক্রোধ প্রকাশকস্বরে ব্যঙ্গোক্তি করিলেন, তাহাতে সেইরূপ সম্ভাবনা বোধ হইল। ব্যঙ্গোক্তি শুনিবামাত্র আয়েষা ওসমানের ক্থার অভিপ্রায় নিঃশেষ বুঝিতে পারিলেন। মুহুত্ত্মাত্র তাঁহার মুখ রক্তবর্ণ হইল। আর কোন অধৈর্য্যের চিহ্ন প্রকাশ পাইল না! স্থিরস্বরে উত্তর করিলেন, “কি উত্তম, ওসমান?”
ওসমান পূর্ব্ববৎ ভঙ্গীতে কহিলেন, “নিশীথে একাকিনা বন্দিসহবাস নবাবপুস্ত্রীর পক্ষে উত্তম। বন্দীর জন্য নিশীথে কারাগারে অনিয়মপ্রবেশ ও উত্তম!”
আয়েষার পবিত্র চিত্তে এ তিরস্কার সঙ্গনাতীত হঠল। ওসমানের মুখপানে চাহিয়া উত্তর করিলেন। সেরূপ গর্ব্বিত স্বর ওসমান কখন আয়েষার কণ্ঠে গুনেন নাই।
আয়েষা কহিলেন, “এ নিশীথে একাকিনা কারাগারমধ্যে আসিয়া এই বন্দীর সহিত আলাপ করা আমার ইচ্ছা। আমার কর্ম্ম উত্তম কি অধম, সে কথায় তোমার প্রয়োজন নাই।”
ওসমান বিস্মিত হইলেন, বিস্মিতের অধিক ক্রুদ্ধ হইলেন; কহিলেন, “প্রয়োজন আছে কি না, কাল প্রাতে নবাবের মুখে শুনিবে।”