পুষ্পক্ষেপণ প্রেরণ করিতেছে; পুষ্পের সৌরভ, সুরভি বারির সৌরভ, সুগন্ধ দীপের সৌরভ, গন্ধদ্রব্যমজ্জিত বিলাসিনীগণের অঙ্গের সৌরভ, পুরীমধ্যে সর্ব্বত্র সৌরভে ব্যপ্ত। প্রদীপের দীপ্তি, পুষ্পের দীপ্তি, রমণীগণের রত্নালঙ্কারের দীপ্তি, সর্ব্বোপরি ঘন ঘন কটাক্ষবর্ষিণী কামিনমণ্ডলীর উজ্জ্বল নয়ন-দীপ্তি। সপ্তস্বরসম্মিলিত মধুর বীণাদি বাদ্যের ধ্বনি আকাশ ব্যাপিয়া উঠিতেছে, তদধিক পরিস্কার মধুরনিনাদিনী রমণকণ্ঠগাতি তাহার সহিত মিশিয়া উঠিতেছে; সঙ্গে সঙ্গে তাললয়মিলিত পাদবিক্ষেপে নর্ত্তকীর অলঙ্কার-শিঞ্জিত মন মুগ্ধ করিতেছে।
ঐ দেখ পাঠক! যেন পদ্মবনে হংসী সমীরণোথিত তরঙ্গহিল্লোলে নাচিতেছে; প্রফুল্ল পদ্মমুখী সবে ঘেরিয়া রহিয়াছে। দেখ, দেখ, ঐ যে সুন্দরী নীলাম্বর-পরিধানা, ঐ বার নীলবাস স্বর্ণতারাবলীতে খচিত, দেখ! ঐ যে দেখিতেছ সুন্দরী সীমন্তপার্শ্বে হীরকতারা ধারণ করিয়াছে, দেখিয়াছ উহার কি সুন্দর ললাট! প্রশান্তি, প্রশস্ত, পরিষ্কার; এ ললাটে কি বিধাতা বিলাসগৃহ লিখিয়াছিলেন? ঐ রে শ্যামা পুষ্পাভরণা, দেখিয়াছ উহার কেমন পুষ্পাভরণ সাজিয়াছে? নারীদেহ শোভার জন্যই পুষ্প-সৃষ্টি হইয়াছিল! ঐ যে দেখিতেছ সম্পূর্ণ, মৃদুরক্ত, ওষ্ঠধর যার; বে ওষ্ঠাধর ঈষৎ কুঞ্চিত করিয়া রহিয়াছে, দেখ উহার সুচিক্কণ নীলবাস ফুটিয়া কেমন বর্ণপ্রভা বাহির হইতেছে; যেন নির্ম্মল নীলাম্বুমধ্যে পূর্ণচন্দ্রালোক দেখা যাইতেছে। এই যে সুন্দরী মরালনিন্দিত-গ্রীবাভঙ্গী করিয়া হাসিয়া হাসিয়া কথা কহিতেছে, দেখিয়াছ উহার কেমন কর্ণেরকুণ্ডল দুলিতেছে? কে তুমি সুকেশি সুন্দরি? কেন উরঃপর্য্যন্ত কুঞ্চিতালকরাশিলম্বিত করিয়া দিয়াছ? পদ্মবঙ্গে কেমন করিয়া কাল-কণিনী জড়ায় তাহাই কি দেখাইতেছ?
আর, তুমি কে সুন্দরি, যে কতলু খাঁর পার্শ্বে বসিয়া হেমপাত্রে সুরা