কতলু খাঁ উন্মত্ত হইল। বিমলাকে ডাকিয়া কহিল, “তুমি কোথা, প্রিয়তমে।”
বিমল কতলু খাঁর স্কন্ধে এক বাহু দিয়া কহিলেন, “দাসী শ্রীচরণে।”—অপর করে ছুরিকা—
তৎক্ষণাৎ ভয়ঙ্কর চীৎকার-ধ্বনি করিয়া বিমলাকে কতলু খাঁ দূরে নিক্ষেপ করিল; এবং যেই নিক্ষেপ করিল, অমনি আপনিও ধরাতলশাষী হইল। বিমলা তাহার বক্ষঃস্থলে আমূল তীক্ষ ছুরিকা বসাইয়া দিয়াছিলেন।
“পিশাচী-শয়তানী!” কতলু খাঁ এই কথা বলিয়া চীৎকার করিল। “পিশাচী নহি—শয়তানী নহি—বীরেন্দ্রসিংহের বিধবা স্ত্রী।” এই বলিয়া বিমলা কক্ষ হইতে দ্রুতবেগে পলায়ন করিলেন।
কতলু খাঁর বাঙ্নিষ্পত্তি-ক্ষমতা ঝটিতি রহিত হইয়া আসিতে লাগিল। তথাপি সাধ্যমত চীৎকার করিতে লাগিল। বিমলাও যথাসাধ্য চীৎকার করিতে লাগিল। বিমলা ও চীৎকার করিতে করিতে ছুটিলেন। কক্ষান্তরে গিয়া কথোপকথন-শব্দ পাইলেন। বিমলা উর্দ্ধশ্বাসে ছুটিলেন। এক কক্ষ পরে দেখেন তথায় প্রহরী ও খোজাগণ রহিয়াছে। চীৎকার শুনিয়া ও বিমলার ত্রস্ত ভাব দেখিয়া তাহারা জিজ্ঞাসা করিল, “কি হইয়াছে?”
প্রত্যুৎপন্নমতি বিমলা কহিলেন, “সর্ব্বনাশ হইয়াছে। শীঘ্র যাও, কক্ষমধ্যে মোগল প্রবেশ করিয়াছে, বুঝি নবাবকে খুন করিল।”
প্রহরী ও খোজাগণ উর্দ্ধশ্বাসে কক্ষাভিমুখে ছুটিল। বিমলাও ঊর্দ্ধশ্বাসে অন্তঃপুর-দ্বারাভিমুখে পলায়ন করিলেন। দ্বারে প্রহরী প্রমোদক্লান্ত হইয়া নিদ্রা যাইতেছিল, বিমলা বিনা বিঘ্নে দ্বার অতিক্রম করিলেন;