পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

অন্তিমকাল

 বিমলার পলায়নের ক্ষণমাত্র পরে একজন কর্ম্মচারী অতিব্যস্তে জগৎসিংহের কারাগারমধ্যে আসিয়া কহিল, “যবরাজ! নবাব সাহেবের মৃত্যুকাল উপস্থিত, তিনি আপনাকে স্মরণ করিয়াছেন।”

 যবরাজ চমৎকৃত হইয়া কহিলেন, “সে কি?”

 রাজপুরুষ কহিলেন, “অন্তঃপুর-মধ্যে শত্রু প্রবেশ করিয়া, নবাব সাহেবকে আঘাত করিয়া, পলায়ন করিয়াছে। এখনও প্রাণত্যাগহয় নাই, কিন্তু আর বিলম্ব নাই, আপনি ঝটিতি চলুন, নচেৎ সাক্ষাৎ হইবে না।”

 রাজপুত্র কহিলেন, “এ সময়ে আমার সহিত সাক্ষাতের প্রয়োজন?”

 দূত কহিল, “কি জানি? আমি বার্ত্তাবহ মাত্র।”

 যবরাজ দূতের সহিত অন্তঃপুরমধ্যে গমন করিলেন। তথায় গিয়া দেখেন যে, কতলু খাঁর জীবন-প্রদীপ সত্য-সত্যই নির্ব্বাণ হইয়া আসিয়াছে, অন্ধকারের আর বিলম্ব নাই, চতুর্দ্দিকে ওস‍্মান, আয়েষা, মুমূর্ষুর অপ্রাপ্তবয়স্ক পুত্রগণ, পত্নী, উপপত্নী, দাসী, অমাত্যবর্গ প্রভৃতি বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে। রোদনাদির কোলাহল পড়িয়াছে; প্রায় সকলে উচ্চরবে কাঁদিতেছে; শিশুগণ না বুঝিয়া কাঁদিতেছে; আয়েষা চীৎকার করিয়া কাঁদিতেছে না। আয়েষার নয়ন-ধারায় মুখ প্লাবিত হইতেছে; নিঃশব্দে