হইতে লাগিল। দেবালয়ে প্রথম-সন্দর্শন, শৈলেশ্বর-সাক্ষাৎ প্রতিজ্ঞা, কক্ষমধ্যে প্রথম-পরিচয়ে উভয়ের প্রেমোত্থিত অশ্রুজল, সেই কালরাত্রির ঘটনা, তিলোত্তমার মুর্চ্ছাবস্থার মুখ, ববনাগারে তিলোত্তমার পীড়ন, কারাগার-মধ্যে নিজ নির্দ্দিয় ব্যবহার, পরে এক্ষণকার এই বনবাসে মৃত্যু, এই সকল একে একে রাজকুমারের হৃদয়ে আসিয়া ঝটিকাপ্রঘাতবৎ লাগিতে লাগিল। পূর্ব্ব-হুতাশন শতগুণ প্রচণ্ড জ্বালার সহিত জ্বলিয়া উঠিল।
রাজপুত্র অনেকক্ষণ মৌন হইয়া বসিয়া রহিলেন। অভিরাম স্বামী বলিতে লাগিলেন, “যেদিন বিমলা যবন-বধ করিয়া বৈধব্যের প্রতিশোধ। করিয়াছিল, সেই দিন অবধি আমি কন্যা-দৌহিত্রী লইয়া যবন-ভয়ে নানা স্থানে অজ্ঞাতে ভ্রমণ করিতেছিলাম; সেই দিন অবধি তিলোত্তমার রোগের সঞ্চার। যে কারণে রোগের সঞ্চার তাহা তুমি বিশেষ অবগত আছ।”
জগৎসিংহের হৃদয়ে শেল বিধিল!
“সে অবধি তাহাকে নানা স্থানে রাখিয়া নানা মত চিকিৎসা করিয়াছি। নিজে যৌবনাবধি চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করিয়াছি, অনেক রোগের চিকিৎসা করিয়াছি; অন্যের অজ্ঞাত অনেক ঔষধ জানি। কিন্তু বে রোগ হৃদয়মধ্যে, চিকিৎসায় তাহার প্রতীকার নাই। এই স্থান অতি নির্জ্জন বলিয়া ইহারই মধ্যে এক নিভৃত অংশে, আজ পাঁচ সাত দিন বসতি করিতেছি। দৈবযোগে এখানে তুমি আসিয়াছ দেখিয়া, তোমার অশ্ববল্গায় পত্র বাঁধিয়া দিয়াছিলাম। পূর্ব্বাবধি অভিলাষ ছিল যে, তিলোত্তমাকে রক্ষা করিতে না পারিলে, তোমার সহিত, আর একবার সাক্ষাৎ করাইয়া, অন্তিমকালে তাহার অন্তঃকরণকে তৃপ্ত করিব।