ধীরে পুনর্ব্বার বিকসিত হয়; জগৎসিংহকে পাইয়া, তিলোত্তমা তদ্রুপ দিনে দিনে পুনর্জ্জীবন পাইতে লাগিলেন।
ক্রমে সবলা হইয়া পালঙ্কোপরি বসিতে পারিলেন। বিমলার অবর্ত্তমানে দুজনে কাছে কাছে বসিয়া, অনেক দিনের মনের কথা সকল বলিতে পারিলেন। কত কথা বলিলেন, মানসকৃত কত অপরাধ ক্ষমা করিলেন, কত অন্যায় ভরসা মনোমধ্যে উদয় হইয়া, মনোমধ্যে নিবৃত্ত হইয়াছিল, তাহা বলিলেন; জাগরণে কি নিদ্রায় কত মনোমোহ স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, তাহা বলিলেন। রুগ্নশয্যায় শয়নে, অচেতনে, এক স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন, এক দিন তাহা বলিলেন—
যেন নব বসন্তের শোভাপরিপূর্ণ এক ক্ষুদ্র পর্ব্বতোপরি তিনি জগৎসিংহের সহিত পুষ্পক্রীড়া করিতেছিলেন; স্তুপে স্তুপে বসন্ত-কুসুম চয়ন, করিয়া মালা গাঁথিলেন, আপনি এক মালা কণ্ঠে পরিলেন, আর এক মালা জগৎসিংহের কণ্ঠে দিলেন; জগৎসিংহের কটিস্থ অসিস্পর্শে মালা ছিঁড়িয়া গেল। “আর তোমার কণ্ঠে মালা দিব না, চরণে নিগড় দিয়া বাঁধিব” এই বলিয়া যেন কুসুমের নিগড় রচনা করিলেন। নিগড় পরাইতে গেলেন, জগৎসিংহ অমনি সরিয়া গেলেন। তিলোত্তমা পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইলেন; জগৎসিংহ বেগে পর্ব্বত-অবতরণ করিতে লাগিলেন। পথে এক ক্ষীণা নিঝরিণী ছিল, জগৎসিংহ লম্ফ দিয়া পার হইলেন। তিলোত্তমা স্ত্রীলোেক—লম্ফে পার হইতে পারিলেন না; যেখানে নির্ঝরিণী সঙ্কীর্ণ হইয়াছে, সেইখানে পার হইবেন, এই আশায় নিঝরিণীর ধারে ধারে ছুটিয়া পর্ব্বত-অবতরণ করিতে লাগিলেন। নিঝরিণী সঙ্কীর্ণ হওয়া দূরে থাকুক, যত যান, তত আয়তনে বাড়ে; নিঝরিণী ক্রমে ক্ষুদ্র নদী হইল, ক্ষুদ্র নদী ক্রমে বড় নদী হইল, আর জগৎসিংহকে দেখা যায় না।