কর; আমি কয়েক দিবস পর্য্যন্ত জ্যোতিষী গণনায় নিযুক্ত আছি; তোমা অপেক্ষা তোমার কন্যা আমার স্নেহের পাত্রী, ইহা তুমি অবগত আছ; স্বভাবতঃ তৎসম্বন্ধেই বহুবিধ গণনা করিলাম।”
বীরেন্দ্রসিংহের মুখ বিশুষ্ক হইল; আগ্রহসহকারে পরমহংসকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “গণনায় কি দেখিলেন?”
পরমহংস কহিলেন, “দেখিলাম যে মোগল-সেনাপতি হইতে তিলোত্তমার মহৎ অমঙ্গল।”
বীরেন্দ্রসিংহের মুখ কৃষ্ণবর্ণ হইল। অভিরামস্বামী কহিতে লাগিলেন,—“মোগলেরা বিপক্ষ হইলেই তৎকর্ত্তৃক তিলোত্তমার অমঙ্গল সম্ভবে, স্বপক্ষ হইলে সম্ভবে না; এই জন্যই আমি তোমাকে মোগল পক্ষে প্রবৃত্তি লওয়াইতেছিলাম। এই কথা ব্যক্ত করিয়া তোমাকে মনঃপীড়া দিতে আমার ইচ্ছা ছিল না; মনুষ্য-যত্ন বিফল; বুঝি ললাটলিপি অবশ্য ঘটিবে, নহিলে তুমি এত স্থিরপ্রতিজ্ঞ হইবে কেন?”
বীরেন্দ্রসিংহ মৌন হইয়া থাকিলেন। অভিরাম স্বামী কহিলেন, “বীরেন্দ্র, দ্বারে কতলুখাঁর দূত দণ্ডায়মান; আমি তাহাকে দেখিয়াই তোমার নিকট আসিয়াছি; আমার নিষেধ-ক্রমেই দৌবারিকেরা এপর্য্যন্ত তাহাকে তোমার সম্মুখে আসিতে দেয় নাই। এক্ষণে আমার বক্তব্য সমাপন হইয়াছে, দূতকে আহ্বান করিয়া প্রত্যুত্তর দাও।”
বীরেন্দ্রসিংহ নিঃশ্বাসসহকারে মস্তকোত্তলন করিয়া কহিলেন, “গুরুদেব! যতদিন তিলোত্তমাকে না দেখিয়াছিলাম, ততদিন কন্যা বলিয়া তাহাকে স্মরণও করিতাম না; এক্ষণে তিলোত্তমা ব্যতীত আর আমার সংসারে কেহই নাই; আপনার আজ্ঞা শিরোধার্য্য করিলাম; অদ্যাবধি