বিশ্রামে, জাগ্রতে, নিদ্রায়, পুন:পুন: যে মনোমোহিনী মূর্ত্তি স্মরণপথে স্বপ্নবৎ যাতায়াত করে, অথচ তৎসম্বন্ধে কখন চিত্তমালিন্যজনক লালসা জন্মায় না, এমন তরুণী দেখিয়াছেন? যদি দেখিয়া থাকেন, তবেই তিলোত্তমার অবয়ব মনোমধ্যে স্বরূপ অনুভব করিতে পারিবেন। যে মূর্ত্তি সৌন্দর্য্য-প্রভাপ্রাচুর্য্যে মন প্রদীপ্ত করে, যে মূর্ত্তি লীলালাবণ্যাদির পারিপাট্যে হৃদয়মধ্যে বিষধর-দন্ত রোপিত করে, এ সে মূর্ত্তি নহে; যে মূর্ত্তি কোমলতা, মাধুর্য্যাদির গুণে চিত্তের সন্তুষ্টি জন্মায়, এ সেই মূর্ত্তি। যে মূর্ত্তি সন্ধ্যাসমীরণ-কম্পিতা বসন্তলতার ন্যায় স্মৃতিমধ্যে দুলিতে থাকে, এ সেই মূর্ত্তি।
তিলোত্তমার বয়স ষোড়শ বৎসর; সুতরাং তাঁহার দেহায়তন প্রগল্ভবয়সী রমণীদিগের ন্যায় অদ্যাপি সম্পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় নাই। দেহায়তনে ও মুখাবয়বে কিঞ্চিৎ বালিকাভাব ছিল। সুগঠিত সুগোল ললাট, অপ্রশস্ত নহে, অথচ অতি প্রশস্তও নহে, নিশীথ-কৌমুদীদীপ্ত নদীর ন্যায় প্রশান্ত ভাব-প্রকাশক; তৎপার্শ্বে অতি নিবিড় বর্ণ কুঞ্চিতালক কেশসকল ভ্রূযুগে, কপোলে, গণ্ডে, অংসে, উরসে, আসিয়া পড়িয়াছে; মস্তকের পশ্চাদ্ভাগে অন্ধকারময় কেশরাশি সুবিন্যস্ত মুক্তাহারে গ্রথিত রহিয়াছে; ললাটতলে ভ্রূযুগ সুবঙ্কিম, নিবিড়বর্ণ, চিত্রকর-লিখিতবৎ হইয়াও কিঞ্চিৎ অধিক সূক্ষ্মাকার; আর এক সূতা স্থূল হইলে নির্দ্দোষ হইত। পাঠক কি চঞ্চল চক্ষু ভালবাস? তবে তিলোত্তমা তোমার মনোরঞ্জিনী হইতে পারিবে না। তিলোত্তমার চক্ষু অতি শান্ত; তাহাতে “বিদ্যুদ্দামস্ফুরণ-চকিত” কটাক্ষ নিক্ষেপ হইত না। চক্ষু দুটী অতি প্রশস্ত, অতি সুঠাম, অতি শান্তজ্যোতি:। আর চক্ষুর বর্ণ, ঊষাকালে সূর্য্যোদয়ের কিঞ্চিৎ পূর্ব্বে চন্দ্রাস্তের সময়ে