পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মন্ত্রণার পর উদ্যোগ
৪৫

কর্ত্তব্যাকর্তব্য তিনি করিবেন। রাজপুত্র যদি তােমাতে অনুরক্ত হন—”

 তিলােত্তমা তাঁহাকে আর বলিতে না দিয়া মুখে বস্ত্র দিয়া কহিলেন,—“তােমার কথা শুনিয়া লজ্জা করে; তুমি যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও না কেন, আমার কথা কাহাকে বলিও না; আর আমার কাছে কাহারও কথা বলিও না।”

 বিমলা পুনর্ব্বার হাসিয়া কহিলেন,—“তবে এ বালিকা-বয়সে এ সমুদ্রে ঝাঁপ দিলে কেন?”

 তিলোত্তমা কহিলেন,—“তুই যা! আমি আর তাের কোন কথা শুনিব না!”

 বি। তবে আমি মন্দিরে যাব না।

 তি। আমি কি কোথাও যেতে বারণ করিতেছি? যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও না।

 বিমল হাসিতে লাগিলেন; কহিলেন—“তবে আমি যাইব না।”

 তিলােত্তমা পুনরায় অধোমুখী হইয়া কহিলেন, “যাও।” বিমলা আবার হাসিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরেকহিলেন—“আমি চলিলাম; আমি যতক্ষণ না আসি, ততক্ষণ নিদ্রা যাইও না।”

 তিলােত্তমা ঈষৎ হাসিলেন; সে হাসির অর্থ এই যে, “নিদ্রা আসিবে কেন?” বিমল তাহা বুঝিতে পারিলেন। গমনকালে বিমলা, এক হস্ত তিলােত্তমার অংসদেশে ন্যস্ত করিয়া, অপর হস্তে তাঁহার চিবুক গ্রহণ করিলেন; এবং কিয়ৎক্ষণ তাঁহার সরল প্রেম-পবিত্র মুখ-প্রতি দৃষ্টি করিয়া, সস্নেহে চুম্বন করিলেন; তিলােত্তমা দেখিতে পাইলেন, যখন বিমল চলিয়া যান, তখন তাঁহার চক্ষে এক বিন্দু বারি রহিয়াছে।