মহাশয়ের অনুগ্রহে আর দশ জনের গােল-হরিবােলে পঞ্চদশ বৎসর পাঠ করিয়া, শব্দকাণ্ড শেষ করিলেন! পরে অন্য কাণ্ড আরম্ভ করিবার পূর্ব্বে অধ্যাপক ভাবিলেন, “দেখি দেখি কাণ্ডখানাই কি?” শিষ্যকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বল দেখি বাপু, রাম শব্দের উত্তর অম্ করিলে কি হয়?” ছাত্র অনেক ভাবিয়া উত্তর করিলেন, “রামকান্ত।” অধ্যাপক কহিলেন, “বাপু, তােমার বিদ্যা হইয়াছে; তুমি এক্ষণে গৃহে যাও, তােমার এখানকার পাঠ সাঙ্গ হইয়াছে; আমার আর বিদ্যা নাই যে তােমাকে দান করিব।”
গজপতি অতি সাহঙ্কার-চিত্ত হইয়া কহিলেন, “আমার এক নিবেদন—আশার উপাধি?”
অধ্যাপক কহিলেন, “বাপু, তুমি যে বিদ্যা উপার্জ্জন করিয়াছি, তােমার নূতন উপাধি আবশ্যক, তুমি ‘বিদ্যাদিগ্গজ’ উপাধি গ্রহণ কর।”
দিগ্গজ হৃষ্টচিত্তে গুরুপদে প্রণাম করিয়া গৃহে চলিলেন।
গৃহে আসিয়া দিগ্গজ-পণ্ডিত মনে মনে ভাবিলেন, “ব্যাকরণাদিতে ত কৃতবিদ্য হইলাম। এক্ষণে কিঞ্চিৎ স্মৃতি পাঠ করা আবশ্যক। শুনিয়াছি, অভিরামস্বামী বড় পণ্ডিত, তিনি ব্যতীত আমাকে শিক্ষা দেয় এমন লােক আর নাই, অতএব তাঁহার নিকটে গিয়া কিছু স্মৃতি শিক্ষা করা উচিত।” এই স্থির করিয়া দিগ্গজ দুর্গমধ্যে অধিষ্ঠান করিলেন। অভিরামস্বামী অনেককে শিক্ষা দিতেন; কাহারও প্রতি বিরক্তি ছিল না। দিগ্গজ কিছু শিখুক বা না শিখুক, অভিরামস্বামী তাহাকে পাঠ দিতেন।
গজপতি ঠাকুর কেবল বৈয়াকরণ আর স্মার্ত নহেন; একটু আলঙ্কারিক, একটু একটু রসিক, ঘৃতভাণ্ড তাহার পরিচয়ের স্থল।