আশঙ্কায় পথিক ততদূর করিলেন না; তথাপি তিনি কবাটে যে দারুণ করপ্রহার করিতেছিলেন, কাষ্ঠের কবাট তাহা অধিকক্ষণ সহিতে পারিল না, অল্পপরেই অর্গলচ্যুত হইল। দ্বার খুলিয়া যাইবামাত্র যুবা যেমন মন্দিরাভ্যন্তরে প্রবেশ করিলেন, অমনই মন্দিরমধ্যে অস্ফুট চীৎকারধ্বনি তাঁহার কর্ণে প্রবেশ করিল ও তন্মূহুর্তে মুক্তদ্বারপথে ঝটিকাবেগ প্রবাহিত হওয়াতে, তথায় যে ক্ষীণ প্রদীপ জ্বলিতেছিল, তাহা নিবিয়া গেল। মন্দিরমধ্যে মনুষ্যই বা কে আছে, দেবই বা কি মূর্তি, প্রবেষ্টা তাহার কিছুর দেখিতে পাইলেন না। আপনার অবস্থা এইরূপ দেখিয়া নির্ভীক যুবা পুরুষ কেবল ঈষৎ হাস্য করিয়া, প্রথমতঃ ভক্তিভাবে মন্দিরমধ্যস্থ অদৃশ্য় দেবমূর্তিকে উদ্দেশে প্রণাম করিলেন। পরে গাত্রোত্থান করিয়া, অন্ধকারমধ্যে ডাকিয়া কহিলেন, “মন্দিরমধ্য়ে কে আছে?” কেহই প্রশ্নের উত্তর করিল না; কিন্তু অলঙ্কার-ঝঙ্কারশব্দ কর্ণে প্রবেশ করিল। পথিক তখন বৃথা বাক্য়ব্যয় নিষ্প্রয়োজন বিবেচনা করিয়া, বৃষ্টিধারা ও ঝটিকাপ্রবেশরোধার্থ দ্বার যোজিত করিলেন, এবং ভগ্নার্গলের পরিবর্তে আত্মশরীর দ্বারে নিবিষ্ট করিয়া পুনর্বার বহিলেন, “যে কেহ মন্দিরমধ্যে থাক, শ্রবণ কর; এই আমি সশস্ত্র দ্বারদেশে বসিলাম, আমার বিশ্রামের বিঘ্ন করিও না। বিঘ্ন করিলে যদি পুরুষ হও, তবে ফলভোগ করিবে; আর যদি স্ত্রীলোক হও, তবে নিশ্চিন্ত হইয়া নিদ্রা যাও, রাজপুতহস্তে অসিচর্ম থাকিতে তোমাদের পদে কুশাঙ্কুর বিঁধিবে না।”
“আপনি কে?” বামাস্বরে মন্দিরমধ্য হইতে এই প্রশ্ন হইল। শুনিয়া সবিস্ময়ে পথিক উত্তর করিলেন, “স্বরে বুঝিতেছি, এ প্রশ্ন কোন সুন্দরী করিলেন। আমার পরিচয়ে আপনার কি হইবে?”