পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শৈলেশ্বর-সাক্ষাৎ
৭৫
যুব। সম্ভব বটে; যে ব্যক্তি পক্ষমধ্যে আত্মপ্রতিশ্রুতি বিস্মৃতা হয়, সে কি সত্য সাক্ষ্য দিয়া থাকে?
বি। মহাশয়! কি প্রতিশ্রুত ছিলাম, স্মরণ করিয়া দিন্।
যুব। তোমার সখীর পরিচয়।

 বিমলা সহসা ব্যঙ্গ-প্রিয়তা ত্যাগ করিলেন, গম্ভীরভাবে কহিলেন,—“যুবরাজ! পরিচয় দিতে সঙ্কোচ হয়। পরিচয় পাইয়া আপনি যদি অসুখী হন?”

 রাজপুত্র কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিলেন; তাঁহারও ব্যঙ্গাসক্ত-ভাব দূর হইল; চিন্তা করিয়া বলিলেন,—“বিমলে! যথার্থ পরিচয়ে কি আমার অসুখের কোন কারণ আছে?”

 বিমলা কহিলেন, “আছে।”

 রাজপুত্র পুনরায় চিন্তামগ্ন হইলেন; ক্ষণ পরে কহিলেন, যাহাই হউক, তুমি আমার মানস সফল কর; আমি যে অসহ্য উৎকণ্ঠা সহ্য করিতেছি, তাহার অপেক্ষা আর কিছুই অধিক অসুখের হইতে পারে না। তুমি যে শঙ্কা করিতেছ, যদি তাহা সত্য হয়, তবে সেও এ যন্ত্রণার অপেক্ষা ভাল; অন্তঃকরণকে প্রবোধ দিবার একটা কথা পাই। বিমলে! আমি কেবল কৌতূহলী হইয়া তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসি নাই; কৌতুহলী হইবার আমার এক্ষণে অবকাশ নাই; অদ্য মাসার্দ্ধমধ্যে অশ্বপৃষ্ঠ ব্যতীত অন্য শয্যায় বিশ্রাম করি নাই। আমার মন অত্যন্ত ব্যাকুল হইয়াছে বলিয়াই আসিয়াছি।

 বিমলা এই কথা শুনিবার জন্যই এত উদ্যম করিতেছিলেন। আর ও কিছু শুনিবার জন্য কহিলেন,—“যুবরাজ! আপনি রাজনীতিতে বিচক্ষণ। বিবেচনা করিয়া দেখুন, এ যুদ্ধকালে কি আপনার দুষ্প্রাপ্য রমণীতে