পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীরপঞ্চমী
৮১

মধ্যে তোমার অপেক্ষা করিব, তুমি আমার হইয়া অকপটে তোমার সখীকে মিনতি করিও; পক্ষ পরে হয়, মাস পরে হয়, আর একবার আমি তাঁহাকে দেখিয়া চক্ষু জুড়াইব।”

 বিমল কহিলেন, “এ আম্রকাননও নির্জন স্থান নহে, আপনি আমার সঙ্গে আসুন।”

 জ। কতদূর যাইব?

 বি। দুর্গমধ্যে চলুন।

 রাজকুমার কিঞ্চিৎ ভাবিয়া কহিলেন, “বিমলা, এ উচিত হয় না। দুর্গ-স্বামীর অনুমতি ব্যতীত আমি দুর্গমধ্যে বাইব না।”

 বিমল কছিলেন, “চিন্তা কি?” রাজকুমার গর্ব্বিতবচনে কহিলেন, “রাজপুত্ত্রের কোন স্থানে যাইতে চিন্তা করে না। কিন্তু বিবেচনা করিয়া দেখ, অম্বরপতির পুত্ত্রের কি উচিত যে, দুর্গ-স্বামীর অজ্ঞাতে চৌরের ন্যায় দুর্গ-প্রবেশ করে?

 বিমলা কহিলেন, “আমি আপনাকে ডাকিয়া লইয়া যাইতেছি।”

 রাজকুমার কছিলেন, “মনে করিও না যে, আমি তোমাকে পরিচারিক জ্ঞানে অবজ্ঞা করিতেছি। কিন্তু বল দেখি, দুর্গমধ্যে আমাকে আহ্বান করিয়া লইয়া যাইবার তোমার কি অধিকার?”

 বিমলাও ক্ষণেক কাল চিন্তা করিয়া কহিলেন, “আমার কি অধিকার তাহা না শুনিলে আপনি যাইবেন না?”

 উত্তর—“কদাপি যাইব না।” বি

 মলা তপন রাজপুত্রের কর্ণে লোল হইয়া একটি কথা বলিলেন।

 রাজপুত্ত্র কহিলেন, “চলুন।”

 বিমল কহিলেন, “যুবরাজ, আমি দাসী, দাসীকে ‘চল’ বলিবেন।”