যুবরাজ বলিলেন, “তাই হউক।”
যে রাজপথ অতিবাহিত করিয়া বিমল যুবরাজকে লইয়া যাইতেছিলেন, সে পথে দুর্গদ্বারে যাইতে হয়। দুর্গের পার্শ্বে আম্রকানন; সিংহদ্বার হইতে কানন অদৃশ্য। ঐ পথ হইতে যথা আমােদর অন্তঃপুরপশ্চাৎ প্রবাহিত আছে, সে দিকে যাইতে হইলে, এই আম্রকানন মধ্য দিয়া যাইতে হয়। বিমলা এক্ষণে রাজবর্ত্ম ত্যাগ করিয়া, রাজপুত্ত্রসঙ্গে এই আম্রকাননে প্রবেশ করিলেন।
আম্রকানন প্রবেশাধি, উভয়ে পুনর্বার সেইরূপ শুষ্কপর্ণভঙ্গসহিত মনুষ্য-পদধ্বনির ন্যায় শব্দ শুনিতে পাইলেন। বিমলা কহিলেন,“আবার।”
রাজপুত্ত্র কহিলেন, “তুমি পুনরপি ক্ষণেক দাঁড়াও, আমি দেখিয়া আসি।”
রাজপুত্ত্র অসি নিষ্কোষিত করিয়া যেদিকে শব্দ হইতেছিল, সেই দিকে গেলেন; কিন্তু কিছু দেখিতে পাইলেন না। আম্রকাননতলে নানা প্রকার অরণ্য লতাদির সমৃদ্ধিতে এমন বন হইয়াছিল এবং বৃক্ষাদির ছায়াতে রাত্রে কানন-মধ্যে এমন অন্ধকার হইয়াছিল যে, রাজপুত্ত্র যেখানে যান, তাহার অগ্রে অধিক দূর দেখিতে পান না। রাজপুত্ত্র এমনও বিবেচনা করিলেন যে, পশুর পদচারণে শুষ্কপত্রভঙ্গ-শব্দ শুনিয়া থাকিবেন। যাহাই হউক, সন্দেহ নিঃশেষ করা উচিত বিবেচনা করিয়া রাজকুমার অসিহস্তে আম্রবৃক্ষের উপর উঠিলেন। বৃক্ষের অগ্রভাগে আরােহণ করিয়া ইতস্ততঃ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন; বহুক্ষণ নিরীক্ষণ করিতে করিতে দেখিতে পাইলেন যে, এক বৃহৎ আম্রবৃক্ষের তিমিরাবৃত শাখাসমষ্টি-মধ্যে দুইজন মনুষ্য বসিয়া আছে। তাহাদের উষ্ণীষে চন্দ্ররশ্মি পড়িয়াছে, ফেলে তাহাই দেখা যাইতেছিল; অবয়ব ছায়ায় লুক্কায়িত ছিল।