পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৬
দুর্গেশনন্দিনী

“কতলু খাঁর আজ্ঞানুবর্ত্তিগণ এই লিপি-দৃষ্টি-মাত্র লিপিবাহকের আজ্ঞা প্রতিপালন করিবে।

কতলু খাঁ।”

 বিমলা কেবল শব্দ শুনিতেছিলেন মাত্র, সবিশেষ কিছুই জানিতে পারেন নাই। রাজকুমার তাঁহার নিকটে আসিয়া সবিশেষ বিবৃত করিলেন। বিমলা শুনিয়া কহিলেন, “যুবরাজ! আমি এত জানিলে কখন আপনাকে বর্শা আনিয়া দিতাম না। আমি মহাপাতকিনী, আজ যে কর্ম্ম করিলাম, বহুকালেও ইহার প্রায়শ্চিত্ত হইবে না।”

 যুবরাজ কহিলেন, “শত্রুবধে ক্ষোভ কি? শত্রুবধ ধর্ম্মে আছে!”

 বিমলা কহিলেন, “যোদ্ধায় এমত বিবেচনা করুক, আমরা স্ত্রীজাতি।”

 ক্ষণপরে বিমলা কহিলেন, “রাজকুমার আর বিলম্বে অনিষ্ট আছে। দুর্গে চলুন, আমি দ্বার খুলিয়া রাখিয়া আসিয়াছি।”

 উভয়ে দ্রুতগতি দুর্গমুলে আসিয়া প্রথমে বিমলা পশ্চাৎ রাজপুত্ত্র প্রবেশ করিলেন। প্রবেশকালে রাজপুত্ত্রের হৃৎকম্প ও পদকম্প হইল। শত-সহস্র সেনার সমীপে যাঁহার মস্তকের একটি কেশও স্থানভ্রষ্ট হয় নাই, তাঁহার এ সুখের আলয়ে প্রবেশ করিতে হৃৎকম্প কেন?

 বিমলা পূর্ব্ববৎ গবাক্ষদ্বার রুদ্ধ করিলেন; পরে রাজপুত্ত্রকে নিজ শয়নাগারে লইয়া গিয়া কহিলেন, “আমি আসিতেছি, আপনাকে ক্ষণেক এই পালঙ্কের উপর বসিতে হইবেক। যদি অন্য চিন্তা না থাকে তবে ভাবিয়া দেখুন যে, ভগবানের আসন বটপত্র মাত্র।”