পাতা:দুর্গেশনন্দিনী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীরপঞ্চমী
৯১

কহিলেন, “তুমি কি জন্য এ দুর্গমধ্যে আসিয়াছ? চোরেরা শূলে যায় তুমি কি শোন নাই?”

সৈনিক। সুন্দরি, আমি চোর নই।
বি। তুমি কি প্রকারে দুর্গমধ্যে আসিলে?
সৈ। তোমারই অনুকম্পায়। তুমি যখন জানালা খুলিয়া রাখিয়াছিলে, তখন প্রবেশ করিয়াছিলাম, তোমারই পশ্চাৎ পশ্চাৎ এ ছাদে আসিয়াছি।

 বিমলা কপালে করাঘাত করিলেন। পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন,—“তুমি কে?”

 সৈনিক কহিলেন, “তোমার নিকট এক্ষণে পরিচয় দিলেই বা হানি কি? আমি পাঠান।”

বি। এ ত পরিচয় হইল না, জানিলাম যে জাতিতে পাঠান,—কে তুমি?
সৈ। ঈশ্বরেচ্ছায় এ দীনের নাম—ওস্মান খাঁ।
বি। ওস্মান খাঁ কে ? আমি চিনি না!
সৈ। ওস্মান খাঁ, কতলু খাঁর সেনাপতি।

 বিমলার শরীর কম্পান্বিত হইতে লাগিল। ইচ্ছা কোনরূপে পলায়ন করিয়া বীরেন্দ্রসিংহকে সংবাদ করেন। কিন্তু তাহার কিছুমাত্র উপায় ছিল না। সম্মুখে সেনাপতি গতিরোধ করিয়া দণ্ডায়মান ছিলেন। অনন্তগতি হইয়া বিমলা এই বিবেচনা করিলেন যে, এক্ষণে সেনাপতিকে যতক্ষণ কথাবার্ত্তায় নিযুক্ত রাখিতে পারেন, ততক্ষণ অবকাশ। পশ্চাৎ দুর্গপ্রাসাদস্থ কোন প্রহরী সে দিকে আসিলেও আসিতে পারে, অতএব পুনরুপি কথোপকথন আরম্ভ করিলেন, “আপনি কেন এ দুর্গমধ্যে প্রবেশ করিয়াছেন?”