পাতা:দুর্নীতির পথে - বিনয়কৃষ্ণ সেন.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবাহ সংস্কার
৩৭

লাম্পট্যের ঔষধ বটে, কিন্তু এ বড় জোরালো ঔষধ; সুতরাং সাবধানে ব্যবহার না করিলে ইহাতে বিপদও ঘটে।”

 কেহ কেহ বলেন, ‘সকলেই স্বেচ্ছামত বিবাহ করিতে বা বিবাহ ভঙ্গ করিতে পারে কিংবা কোনো প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ না করিয়া অবাধে ইন্দ্রিয়সেবা করিতে পারে।’ শ্রীযুক্ত বুরো এই মত খণ্ডন করিয়াছেন। তিনি বলেন, ‘নিজের ইচ্ছামত বিবাহ করার অথবা নিজের সুবিধার জন্য অবিবাহিত থাকার অধিকার সকলেরই আছে এরূপ মনে করা ভুল। আরও ভুল হইবে যদি আমরা মনে করি যে, খুসীমত বিবাহ-বন্ধন ছিন্ন করার অধিকার স্বামী-স্ত্রীর আছে। পরস্পরকে মনোনীত করিয়া লইবার স্বাধীনতা সকলেরই আছে কিন্তু মনোনয়নের পূর্ব্বেই, নবজীবনের দায়িত্বভার যাহার সহিত একসঙ্গে বহন করিতে হইবে, তাহার সম্যক পরিচয় লওয়া এবং সে সম্বন্ধে বিশেষভাবে বিবেচনা করা আবশ্যক। কিন্তু বিবাহ হইয়া গেলে এবং একবার স্ত্রী পুরুষের দৈহিক মিলন সংঘটন হইলে তাহার বিপুল ফল কেবল দুটিমাত্র প্রাণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকিয়া নানাদিকে বহুদূর পর্য্যন্ত বিস্ত‌ৃত হইয়া পড়ে। বর্ত্তমান কালের উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্রের যুগে দম্পতির পক্ষে এই ফলের গুরুত্ব উপলব্ধি করা হয়ত সম্ভব নয়; কিন্তু যখনই গৃহের ভিত্তি নড়িয়া যায় এবং উচ্ছৃঙ্খল ইন্দ্রিয়লালসা একবিবাহের মঙ্গলকর সংযমের স্থান অধিকার করে তখনই সমাজদেহে নানাপ্রকার পীড়া উপস্থিত হইয়া ঐ গুরুত্ব উপলব্ধি করায়। এসব বহুদূর বিস্ত‌ৃ‌ত ফলাফল এবং সূক্ষ্ম কার্য্যকারণ সম্বন্ধগুলি যিনি উপলব্ধি করিতে সক্ষম তিনি, মানুষের অন্যান্য প্রথার মত বিবাহ প্রথাও যে বিবর্ত্তনশীল ইহা জানিয়া ভীত হইবেন না, কারণ এ কথা নিশ্চিত যে, বিবাহবন্ধন যত নিবিড় হইবে, বিবাহের আদর্শও তত উন্নত হইবে।