পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

একটা দিনের কথা এমন চমৎকার মনে আসে eee শীতের সকাল । বাড়ির বার হয়েই দেখি চারিধারে বনে জঙ্গলে পাহাড়ের ঢালুৱ গায়ে পাইন গাছের ফাকে বেশ রোদ। আমি উঠতাম খুব সকালেই, সীতা ও দাদা। তখন লেপের তলায়, চা না পেলে, এই হাড়কাপানো শীতে উঠতে কেউ রাজী নয়। শীতও পড়েছে দস্তুরমত। আমাদের বাগানের দক্ষিণে কিছু দূরে যে বড় চা-বাগানটা নতুন হয়েছে, যার বাংলোগুলোর লাল টালির ঢালু ছাদ আমাদের এখান থেকে দেখা যায়। পাইন গাছের ফাকে, আজ তাদের লোকজনেরা চায়ের চারাগাছ খড়ের পালুটি দিয়ে ঢেৰে, দিচ্ছে বোধ হয় বরফ পড়বার ভয়ে। আকাশ পরিষ্কার, সুনীল, কোনোদিকে এতটুকু কুয়াশা নেই ; বরফ পড়বার দিন বটে । R একটু পরে সীতা উঠল। সে রোগা, ফর্সা, ছিপছিপে । সে ও দাদা খুব ফর্সা, তবে অত ছিপছিপে আর কেউ নয়। সীতা বললে, থাপা কোথায় গেল দাদা ? আজ ও সোনাদা যাবে ? বাজার থেকে একটা জিনিস আনতে দেবো । আমি বললাম-কি জিনিস রে ? সীতা দুষ্টুমির হাসি হেসে বললে, বলবো কেন ? তোমরা যে কত জিনিস আনাও আমায় বলে ? একটু পরে থাপি এল । সে হ্যািপ্তায় দু-দিন সোনাদা বাজারে যায়। তরকারি। আর মাংস আনতে। সীতা চুপি চুপি তাকে কি আনতে ব’লে দিলে, আড়ালে থাপাকে জিজ্ঞেস ক’রে জানলাম জিনিসটা একপাত সেফটিপিন। এরই জন্যে এতো ! একটু বেলায় বরফ পড়তে শুরু হ’ল। দেখতে দেখতে বাড়ির ছাদ, গাছপালার মাথা, পথঘাট যেন নৱম থোকা থোকা পেঁজা কাপাস তুলোতে ঢেকে গেল। এই সময়টা ভারি ভাল লাগে, আগুনের আংটাতে গানগনে আগুন-হাড়কাপানো শীতের মধ্যে আগুনের চারিধারে বসে আমি দাদা ও সীতা লুডো খেলতে শুরু ক’রে দিলাম । এই সময় বাবা এলেন আপিস থেকে । ম্যানেজারের কুঠীর পাশেই আপিস-ঘর, আমাদের বাংলো থেকে প্রায় মাইলথানেক, কি তার একটু বেশী। বাবা বেলা এগারোটার সময় ফিরে খাওয়া-দাওয়া ক’রে একটু বিশ্ৰাম করেন, তিনটের পরে বেরোন, ওদিকে রাত আটটা-ন’টায় আসেন । বাবা আমাদের সকলকে নিয়ে খেতে ভালবাসতেন। সীতাকে ডেকে বললেন-খুকী থাপাকে বলে দে নাইবার জন্তে জল গরম করতে।--আর তোরা সব আজ আমার সঙ্গে খাবিনিতুকে বলিস নইলে সে আগেই খাবে। Se