পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৯

বটেশ্বরনাথ পাহাড়ের দিনগুলো মনে আমার অক্ষয় হয়ে থাকবে । রূপে, বেদনায়, স্মৃতিতে, অনুভূতিতে কানায় কানায় ভরা কি সে-সব অপূর্ব দিন! অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু প্রমের অমর মধুমুহুৰ্ত্তগুলির ছায়াপাতে তাদের স্মৃতি আমার কাছে চিরপ্তামিল। শরতের পুরে নিভৃত বননিবিড আধিত্যকায় চুপ ক’রে ঝরা-পাহাড়ী-কুরচি-ফুলের শয্যায় বসে চারি দিকে রৌদ্রদীপ্ত পাহাডশ্রেণীর রূপ ও শরতের আকাশের সাদা সাদা মেঘখণ্ডের দিকে চেয়ে চেয়ে |ালতীর ভাবনাতে সারাদিন কাটিয়ে দিতাম। তিনটাঙার মাঠে বটগাছের সবুজ মগডালে |াদা সাদা বকের সারি ব’সে আছে, যেন সাদা সাদা অজস্ৰ ফুল ফুটে আছে-কত কি ব্লং, প্রথমে মাটির ধূসর রং, তার পর কালো সবুজ গাছপালা, তার ওপবের পর্দায় নীলকৃষ্ণ পাহাড়, গার ওপরে সুনীল ও সাদা মেঘসৃপ, সকলের নীচে কুলে কুলে ভরা গৈরিক জলরাশি। কিসে যন পডেছিলুম ছেলেবেলায় মনে পডে অলসে বহে তটিনী নীর, বুঝি দূরে—অতি দূরে সাগর, তাই গতি মন্থর, শ্ৰান্ত, শান্ত পদসঞ্চার ধীর । আগে প্ৰেম ক’কে বলে তা জানতাম না, জীবনে তা কি দিতে পারে, তা ভাবিও নি কোন দন। এখন মনে হয় প্ৰেমই জীবনের সবটুকু। স্বৰ্গ কবির কল্পনা নয়-স্বৰ্গ এই পিয়ালতলায়, ৰ্গ তার স্মৃতিতে। নয়তো কি এত রূপ হয়। এই শিলাস্তৃত আধিত্যকার, ওই উচ্চ মেঘপদবীর, 3ষ্ট পুণ্যসলিলা নদীর, ওই বননীল দিগন্তরেখার ! দিনে রাতে মালতী আমায় ছাড়ে কখন ? সব সময় সে আমার মনে আছে। এই দুপুর, এখন সে আখড়ার দাওয়ায় পরিবেশন করছে । এই বিকেল, এখন সে কাপড় সেলাই করছে, {য় তো মুগাকলাই ঝাড়ছে। এই সন্ধ্যা, এখন সে টান-টান ক’রে তার অভ্যস্ত ধরনে চুলটি বঁধে, ফুল্লাধারে মুদু হেসে বিষ্ণুমন্দিরে প্রদীপ দেখাতে চলেছে। আজি মঙ্গলবার, সারাদিন সে উপবাস ক’রে আছে, আরতির পরে দুধ ও ফল খাবে। সেই নিঃসঙ্কোচে পুকুরেব ঘাটে বসে {সে আমাকে গান-শোনানো, আমার সঙ্গে শিবের মন্দিরে যাওয়া-খাতা পডে শোনানোকলের ওপরে তার হাসি, তার মুখের সে অপূর্ব হাসি! কত কথাই মনে এসে নির্জনে নাপিত প্ৰতি প্ৰহরটি আনন্দবেদনায় অলস ক’রে দিত । দূরের গিরি-মানুর গায়ে ক্রীড়ারত শুভ্ৰ মেঘরাজির মধ্যে এমন কি কোন দয়ালু মেঘ নেই ষে এই কুটিজ-কুসুমাস্তীর্ণ নিভৃত আধিত্যকার ওপর দিয়ে যেতে যেতে পিয়ালতলার এই নিৰ্বাসিত যক্ষের বিরহাবাৰ্ত্তাটি শুনে জেনে নিয়ে বাংলা দেশের প্রান্তর মধ্যবৰ্ত্তী অলকাপুরীতে পৌছে দেয়। তার কানে ? SE