পাতা:দৃষ্টিপ্রদীপ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপক্রম হ’ল। সীতাকে আমি জড়িয়ে ধ'রে কাছে নিয়ে এলুম। অন্ধকারে আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছিলাম না বটে, কিন্তু আমরা জানতাম ভালুক যে পথে আসে পথের ছোটখাটাে গাছপালা ভাঙতে ভাঙতে আসে। একটা কোনো ভারী জানোয়ারের অস্পষ্ট পায়ের শব্দের সঙ্গে কাঠাকুটো ভাঙার শব্দে আমাদের সন্দেহ রইল না যে, আমরা যো-পথ দিয়ে এইমাত্ৰ উঠে এসেছি, সেই পথেই ভালুক উঠে আসছে আমাদের পেছনে পেছনে। আমরা প্ৰাণপণে পাহাড় ঘেঁষে দাড়ালাম, ভরসা। যদি অন্ধকারে না দেখতে পেয়ে সামনের পথ দিয়ে চলে যায়-•আমরা কাঠের পুতুলের মত দাড়িয়ে আছি, নিশ্বাস পড়ে কি না-পড়ে—এমন সময়ে পাকদণ্ডীর মোড়ে একটা প্ৰকাণ্ড কালো জমাট অন্ধকারের ভূপ দেখা গেল-ভূপটা একবার ডাইনে একবার বঁায়ে বেঁকে বেঁকে আসছে-যতটা ডাইনে, ততটা বঁায়ে নয়-আমরা যেখানে দাড়িয়ে আছি সেখান থেকে দশ গজের মধ্যে এল-তাৱ ঘন ঘন হঁপানোর ধরনের নিঃশ্বাসও শুনতে পাওয়া গেলআমাদের নিজেদের নিঃশ্বাস তখন আর বইছে না-কিন্তু মিনিটখানেকের জন্য-একটু পরেই আর ভূপটিাকে দেখতে পেলাম না-যদিও শব্দ শুনে বুঝলাম সেটা পাকদণ্ডীর ওপরকার পাহাড়ী ঢালুর পথে উঠে যাচ্ছে। আরো দশ মিনিট আমরা নড়লাম না, তারপর বাকী পথটা উঠে এসে লিণ্টন বাগানের রাস্তা পাওয়া গেল। আধ মাইল চলে আসবার পরে উমাপ্লাঙের বাজার। এই বাজারের অমৃত সাউ মিঠাই দেয় আমাদের বাসায় আমরা জানতাম।--দাদা তার দোকানটাও চিনত। দোরে ধাক্কা দিয়ে ওঠাতে সে বাইরে এসে আমাদের দেখে অবাক হয়ে গেল । আমাদের তাড়াতাড়ি ঘরের মধ্যে নিয়ে গিয়ে আগুনের চারিধারে বসিয়ে দিলেআগুনে বেশী কাঠ দিলে ও বড় একটা পেতলের লোটায় চায়ের জল চড়ালে। তার বৌ উঠে । আমাদের শুকনো কাপড় দিলে পরিবার ও ময়দা মাখতে বসল। রাত তখন দশটার কম। নয়। আমরা বাসায় ফিরবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে পড়েছি।-বললাম-আমরা কিছু খাব না, ' আমরা এবার যাই। অমৃত সাউ একা আমাদের ছেড়ে দিলে না, তার ভাইকে সঙ্গে পাঠালে।. রাত প্ৰায় সাড়ে এগারোটার সময় বাগানে ফিরে এসে দেখি হৈ হৈ কাণ্ড। বাবা বাসায় নেই, তিনি সেদিন খুব মদ খেয়েছিলেন, ফেরেননি, তার ওপরে আমরাও ফিরিনি, মা পচাঙে লোক পাঠিয়েছিলেন, সে লোক ফিরে এসে বলেছে ছেলেমেয়েরা তো সন্ধ্যের আগেই সেখান থেকে রওনা হয়েছে! এদিকে নাকি খুব বড় হয়ে গিয়েছে, আমরা আরও উচুতে থাকবার জন্যে ঋড় পাইনি-নীচে নাকি অনেক গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এই সব ব্যাপারে মা ব্যস্ত হয়ে লাহেবের বাংলোয় খবর পাঠান-ছোট সাহেব চারিধারে আমাদের খুজতে লোক পাঠিয়েছে। মা এতক্ষণ করেননি, আমাদের দেখেই আমাদের জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন-লে এক बांनांव चांद्र कि ! কিন্তু পরদিন যে ঘটনা ঘটল তা আরও গুরুতর। পরদিন চা-বাগানে বাবার চাকরি